বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্ববাজারে বাড়ছে টিস্যু পেপারের দাম

বাড়তে পারে বাংলাদেশেও তাইওয়ানে টয়লেট টিস্যু কিনতে কাড়াকাড়ি

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে— এমন আতঙ্কে টয়লেট টিস্যু কিনতে কাড়াকাড়ি শুরু করেছেন তাইওয়ানের ক্রেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, দেশটির খুচরা দোকানের তাকগুলো এখন শূন্য, যেখানে সাধারণত টয়লেট টিস্যু রাখা হয়। জানা যায়, দেশটির কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের জানিয়ে দিয়েছে আগামী মাস থেকে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ছে টয়লেট পেপারের দাম। অনেক দোকানি জানিয়েছেন, দাম বৃদ্ধির চেয়েও ক্রেতাদের বড় আতঙ্ক ছিল বাজার টয়লেট টিস্যু শূন্য হয়ে পড়বে। ফলে দোকান থেকে সবাই পণ্যটি অতিরিক্ত কিনে জমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।

তাইওয়ানের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে টয়লেট পেপারের কাঁচামালের দাম বাড়ায় এ পণ্যটির দামও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ কানাডায় দাবানলে বন পুড়ে গেছে, যেখান থেকে টয়লেট পেপারের বিপুল কাঁচামাল আসে। এর পাশাপাশি ব্রাজিলেও পণ্যটির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এসব ঘটনায় টয়লেট পেপার তৈরির উপকরণ শর্ট ফাইবার পাল্পের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি টন ৮০০ ডলার। এক বছর আগে দাম ছিল ৬৫০ ডলার।

তবে তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় টয়লেট পেপার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াইএফওয়াই জানায়, সরকার যে তথ্য দিয়েছে প্রকৃত পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ। অনেক দ্রুত পাল্পের (মন্ড) দাম বাড়ছে, এমনকি গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত পণ্যটির দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি বেড়েছে মোড়কজাতকরণ ও পরিবহন খরচ। প্রতিষ্ঠানটির মতে, কাঁচামালের দাম বাড়ায় বিশ্ববাজারে টয়লেট টিস্যুর দাম বাড়বে, এমন খবর আসাটাই স্বাভাবিক।

ইতিমধ্যে চীনের দূষণবিরোধী অভিযানে সরকার এক হাজারেরও বেশি পেপার মিল বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটি মন্ড তৈরিতে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত পেপার আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে। ফলে দেশটিতেও টয়লেট পেপার উৎপাদন কমবে। অন্যদিকে ভারতেও পেপার উৎপাদন কমেছে বছরে ২৫ লাখ টন। ফলে দেশটি রপ্তানির পরিবর্তে বর্তমানে পেপার আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। অন্য সার্ক দেশের মধ্যে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, আফগানিস্তান এবং মিয়ানমার তাদের প্রয়োজনীয় পেপারের শতভাগই আমদানি করে থাকে। পাকিস্তানও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেপার আমদানি করে। ফলে চীনসহ কয়েকটি দেশে মন্ড উৎপাদন কমার বিপরীতে বিপুল আমদানির কারণে বিশ্ববাজারে বাড়বে পেপারের দাম। যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও।

বাংলাদেশের বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্পের দাম ৮০০ ডলার পড়লে এ থেকে পেপার উৎপাদনে আরও ৩০০ ডলার যোগ করতে হয়। ফলে প্রতি টন পেপারের ন্যূনতম খরচ পড়বে ১১০০ ডলার। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম পড়ে ৯২ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ ধরে দেশে প্রতি টন পেপারের দাম হবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। এ অবস্থায় খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই।

এদিকে তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় হোম শপিং চ্যানেল ইটি মল জানায়, তাদের বিক্রি হওয়া শীর্ষ ২০টি পণ্যের মধ্যে ছয়টিই ছিল টয়লেট পেপার। এর চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে আতঙ্কিত না হতে বলা হয়েছে। ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, সুপার মার্কেটগুলো সহসাই তাদের টয়লেট টিস্যুর তাক পুনরায় পূরণ করে নিতে পারবে।

তাইওয়ান সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, দেশের চারটি বড় খুচরা কোম্পানি ক্যারেফোর, আরটি-মার্ট, এডট মার্ট এবং পিএক্স মার্ট তাদের নিশ্চিত করেছে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দাম বাড়বে না। তথ্যসূত্র : বিবিসি

সর্বশেষ খবর