বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বায়োচার ব্যবহার করে ধানের চারা রোপণ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বায়োচার ব্যবহার করে ধানের চারা রোপণ

কম খরচে, অধিক ফলনে জমিতে পরিবেশবান্ধব বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। অধিক লাভবান ও জমির গুণ ঠিক রাখতেই কৃষক ঝুঁকছেন এই বায়োচার ব্যবহারে। বায়োচার ব্যবহারের  ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি, পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, মাটির পুষ্টি উপাদান ধরে রাখা, মাটিকে সংশোধন করে মাটিতে অবস্থানকারী ছোট ছোট অণুজীবকে সক্রিয় করে তোলে। এ ছাড়া রাসায়নিক সার কম লাগে। তাই খরচ কমে যায়। এতে ফলনও দিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বায়োচার নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি। সিসিডিবির নবাবগঞ্জ অফিসের ইস্টিভান হেমরোং জানান, কৃষকদের বায়োচার পদ্ধতিতে চাষে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের ৪ শতক জমির জন্য বায়োচার কিনে ব্যবহার করার পর সেচসহ অন্যান্য খরচের ৫০ ভাগ প্রদর্শনী খেতের জন্য সিসিডিবি ছাড় দিচ্ছে। নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর, দাউদপুর, ভাদুরিয়া ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন ছাড়াও মানিকগঞ্জের শিবালয় ও নওগাঁর মান্দা উপজেলায় এই বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করে শুরু হয়েছে ধান চাষ। গত মৌসুমে দেখা গেছে, ৩৩ শতকে ধান চাষ করে ৩৫ মণ পাওয়া যায়, সেখানে বায়োচার ব্যবহার করে ৩৮ মণ ধানের ফলন হয়েছে। দাউদপুর ইউনিয়নের উত্তর মুরাদপুর গ্রামের কৃষক মো. মুক্তার আলী ৪ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড পারটেক্স-৬ ধান রোপণ করেন। তিনি জানান, সিসিডিবির মাধ্যমে জানতে পারি, আখা (বিশেষ চুলা) থেকে বায়োচার উৎপাদন করে কৃষক জমিতে ব্যবহার করছেন। বায়োচার জমিতে পরিমাণমতো একবার প্রয়োগ করতে হয়, বার বার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

সিসিডিবি ঢাকা অফিসের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষ্ণকুমার সিনহা জানান, পাইরোলসিস পদ্ধতিতে কাঠের গ্যাসে জ্বলে কার্বনটা কয়লার মধ্যে ধরে রাখে— এটাই বায়োচার। আখা বা বিশেষ ধরনের এ চুলায় পোড়ানো কাঠ-কয়লা নিয়ে গুঁড়া করে খেতে ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে জমির পানি ও সার ধরে রেখে গাছের পুষ্টি জোগায়। ফলে জমিতে সার ও পানি কম লাগায় খরচ কমে যায়। বিশেষ ধরনের কাঠ-কয়লা পোড়ানো চুলা এখন সিসিডিবি ্বিক্রি করে স্বল্প দামে। এ চুলা কিনে রান্নার কাজ করা যাবে এবং প্রাপ্ত পোড়ানো কয়লা দিয়ে বায়োচার কাজে লাগাতে পারবে। ১ কেজি কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ৮০০ গ্রাম কয়লা পাওয়া যায়। আখা বা বিশেষ ধরনের চুলায় বা ৫০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পোড়ানো কাঠ-কয়লা জমিতে ব্যবহারই বায়োচার বলা হয়। পরিবেশবান্ধব এই বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহারে জমির ফলনও বৃদ্ধি পায়। সিসিডিবির নবাবগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা মো মঞ্জুরুল ইসলাম ও ইস্টিভান হেমরোং জানান, সিসিডিবির বিশেষ ধরনের চুলা ফোরামের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সদস্য হলে তাকে ট্রেনিং ও চুলা ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয় এবং একটি চুলা দেওয়া হয়। এ চুলায় রান্নার পাশাপাশি বায়োচার তৈরি করে কৃষকের কাছে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন তারা। এ বায়োচার আলু, সবজি চাষ ছাড়াও ধানের খেতে ব্যবহার হচ্ছে। ১ হেক্টর জমিতে সাধারণত ৫ টন উৎপাদন হয় কিন্তু বায়োচার ব্যবহারে ফলন ৮-১০ টন উৎপাদন হবে।

সর্বশেষ খবর