শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মিয়ানমারের

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মিয়ানমারের

তুমব্রুর কোনারপাড়া, চাকমাপাড়া থেকে শুরু করে সীমান্তের বিশাল অংশের কোথাও কোথাও নতুনভাবে দুই স্তরে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে মিয়ানমার। আর এ কাজে সাদা পোশাকের আড়ালে যোগ দিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আবার কোথাও চলছে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর গোলাকার পেঁচানো তার বসানোর কাজ। নির্মাণকাজে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের দেখভাল করার জন্য নিয়মিত টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর পেট্রল দলের সদস্যরা। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশের ভূমি থেকে এসব সুস্পষ্ট দেখা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করায় তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে শান্ত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাফ নদের ওপারের বিভিন্ন অংশে এবং তুমব্রু সীমান্তে নিয়মিতই টহল দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ। তাদের মতে, বাংলাদেশকে উসকে দিয়ে অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করতে চাইছে মিয়ানমার। কোনো ধরনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নেই। বৈঠক হলেও যৌথ সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে যাচ্ছে মিয়ানমার। একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে দেশটি এখন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া দ্বিগুণভাবে নির্মাণ করে যাচ্ছে। এদিকে অন্যান্য দিনের মতো গতকালও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্থানত্যাগের জন্য মাইকিং করা হয়েছে। গাছে মাইক টাঙিয়ে বলা হয়, ‘এখানে (জিরো পয়েন্ট) থাকা অবৈধ। তোমরা অন্য কোনো স্থানে চলে যাও।’ এ অবস্থায় প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সীমান্তের রোহিঙ্গারা। তারা এপারে যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্থান ত্যাগ করতে আগের চেয়ে আরও বেশি হুমকি দিচ্ছে বলে জানান রোহিঙ্গা আবদুর রহিম।

তুমব্রু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কোথাও কোথাও দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এটা মূলত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকানোর নতুন কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে নানাভাবে চাপ আসতে থাকায় তারা আগে থেকেই তা ঠেকানোর কৌশল নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে চায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক বলেন, ‘সীমান্তে কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। তবে মিয়ানমার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে সীমান্তে সেনা-বিজিপির টহল বাড়িয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বিজিবি। এদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি কাঁটাতারের বেড়ার কাছেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহারায় থাকার কারণে আতঙ্ক কমেনি শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ও তুমব্রু সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের। গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন মাসে মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা। এ সময় তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয় সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা। এদেরও বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি প্রতিদিন নতুন করে নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (নেতা) দিল মোহাম্মদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর