শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

উটপাখির খামার দিনাজপুরে

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

উটপাখির খামার দিনাজপুরে

‘মরুভূমির জাহাজ’ বলে পরিচিত উটপাখির খামার গড়ে তোলা হয়েছে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরে। এখানকার আরজুমান আরার খামারে এ পাখির পালন শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া এ পাখি পালনের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। জানা গেছে, দেশের মধ্যে দিনাজপুরে এটাই প্রথম উটপাখির খামার। জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউপির দাদন-মালিপাড়ার ব্যবসায়ী সাদনানের স্ত্রী আরজুমান আরা নিজ বাড়িতে ‘ইকো এগ্রো ফার্ম’ নামে এ খামার গড়ে তুলেছেন। এ প্রতিনিধিকে আরজুমান আরা জানান, পাঁচ মাস আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২০টি উটপাখির এক দিনের বাচ্চা কিনে নিয়ে আসেন। প্রতিটি বাচ্চার দাম পড়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। সব বাচ্চা সুস্থ ও ভালো আছে। বাচ্চাগুলোর পূর্ণ বয়স্ক হতে আড়াই বছর লাগবে। তখন থেকে ডিম দেওয়াও শুরু করবে। একেকটি ডিম দেড় কেজি করে ওজনের হয়। বছরে একেকটি উটপাখি ৫০ থেকে ৮০টি করে ডিম পাড়ে। তিনি ওয়াকিবহালদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী হয়। গ্রোথ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া গরু-ছাগলের চেয়ে বেশি।

পূর্ণ বয়স্ক একটি উটপাখির মাংস হয় প্রায় আড়াই মণ। এদের খাদ্যও সহজলভ্য। এরা নেপিয়ারসহ যে কোনো ঘাস, পোল্ট্রি ফিড এবং পাথর খায়। তবে এ পাখি পালনে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, বিশেষ যত্নও নিতে হয়। এদের বিচরণে পর্যাপ্ত জায়গারও প্রয়োজন হয়। আরজুমান আরা আরও জানান, উটপাখির বাচ্চা বড় করতে আর ফিডব্যাক পেতে সময় লাগে। গরু বছরে একটি মাত্র বাচ্চা দেয়। কিন্তু উটপাখির একটি বাচ্চার দামই ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অতএব সেই তুলনাই গরু পালনের চেয়ে উটপাখি পালন বেশি লাভজনক। গরুর বিকল্প হিসেবে একদিন হয়তো উটপাখিই স্থান করে নেবে। ওয়াকিবহালরা জানান, উটপাখি বেশি দিন বাঁচে এবং ডিমও দেয় অনেক। এর মাংসও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই এ পাখি পালন অত্যন্ত লাভজনক। সুতরাং আগামীতে গরু ও ছাগলের বিকল্প হবে এই উটপাখি। এ ছাড়া উটপাখির চামড়াও মূল্যবান। এদের মাংস অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক উটপাখির ওজন হয় ৬০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত। উটপাখি ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ডিম দেয় এবং এরা বাঁচে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০ বছর। ফলে বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির খামার করা দেশের জন্য উজ্জ্বল দিগন্ত। বাংলাদেশে আরও উটপাখির খামার গড়ে উঠলে সত্যিই এ পাখি গরু-ছাগলের বিকল্প হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের শেষের দিকে উটপাখি নিয়ে গবেষণার জন্য হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভেটেরিনারি অনুষদের অডিটরিয়াম-২ এর পাশে গড়ে তোলা হয় আরেকটি উটপাখির খামার। প্রধান গবেষক ও হাবিপ্রবির জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল গাফফার মিয়া জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া উটপাখি পালনে সম্পূর্ণ উপযোগী।

সর্বশেষ খবর