রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপে রাজশাহীর এমপিরা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপে রাজশাহীর এমপিরা

আওয়ামী লীগ আগেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও মাঠে। বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি আসনগুলোতে এবার একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন চান। বর্তমান এমপিদের বিরোধিতা করে মাঠেও আছেন তারা। ফলে সবগুলো আসনেই বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা।

রাজশাহী-১ আসনের বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। পর পর দুবার তানোর-গোদাগাড়ী থেকে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। এবার ওই আসনটিতে মনোনয়ন চান সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, মকবুল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান এবং জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব জেমস। এই সাত নেতা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছেন ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। রাজশাহী-২ আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালে ১৪ দল আসনটি পায়। এর পর থেকে আসনটি জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির। এবার এ আসনে দলীয় প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ। তবে সে আশা ক্ষীণ হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে কেন্দ্র থেকে মেয়র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলার পর থেকে। এ আসনে এবার দলের মনোনয়ন চান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সহ-সভাপতি মীর ইকবাল। তবে এ আসনে আবারও মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বর্তমান এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা— এমন আভাসের পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা থেকে অনেকটা সরে এসেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, দলের নেতা হিসেবে তিনি এবং আরও কয়েকজন সদরে দলের প্রার্থিতা চেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে তারা সেভাবেই কাজ করবেন। দলের প্রার্থী দাবি করা দোষের কিছু নয় বলে তিনি মনে করেন। ‘বহিরাগত’দের আসন হিসেবে বদনাম আছে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের। এর ওপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার ‘বিদ্রোহ’ এ আসনে দলের ভাবমূর্তি খানিকটা হলেও খাটো করেছে। পবা-মোহনপুর আসনটি তৈরি হয় ২০০৮ সালে। সে সময় ওই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। আর আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের টিকিট পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। ক্ষোভ সামলাতে না পেরে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন মেরাজ মোল্লা। তবে ‘নতুনের জোয়ারে’ প্রথমবারই নির্বাচনী বৈতরণী উতরে একেবারে ‘ঘরের ছেলে’ বনে যান আয়েন উদ্দিন। এবার মেরাজ মোল্লার পাশাপাশি ওই আসনে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দলের নেতা হিসেবে তিনি ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি নৌকার পক্ষে এলাকায় ভোট প্রার্থনা করে গণসংযোগ করছেন। বাগমারা উপজেলাকে নিয়ে রাজশাহী-৪ আসন। গত দুই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এখানে বিজয়ী হয়েছেন এনামুল হক। দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, আগামী নির্বাচনেও এ আসনের শক্ত প্রার্থী এনামুল হক। এনামুল হকের বিরোধিতায় মাঠে নেমেছেন উপজেলায় দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু এবং তাহেরপুর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। তারা নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন উপজেলায়। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ। তার বিরোধিতায় মাঠে আছেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুনসুর রহমান ও দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। তারা এবার ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দারাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। চারঘাট ও বাঘা উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ সংসদীয় আসন। চারঘাট-বাঘা আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে ২০০৮ সালে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন শাহরিয়ার আলম। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তাকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিপক্ষে। এবারও দলের ভিতর তার বিপক্ষে অবস্থান করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, সাবেক এমপি রায়হানুল হক, বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী। তারা এবার এ আসনে দলের মনোনয়ন চান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০০৮ সালে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছিল, ২০১৪ সালেও তারা বিরোধিতা করেছে। তারা কখনো নৌকার পক্ষে কাজ করেনি।’

সর্বশেষ খবর