‘স্যার, ঘটনার আগে আমার স্বামী হাসান ও তার বন্ধু মানিক ঘরের বাইরে ছাদের ওপর মাদুর বিছিয়ে বসে গান শুনছে এবং সিগারেট খাচ্ছে। এর কিছু সময় পরই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি যে, আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে একজন লোককে লক্ষ্য করছে। তখন আমার স্বামীর হাতে থাকা কালো রঙের একটি পিস্তল দিয়ে দুইটি গুলি করেছে।’ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. জালালউদ্দিন হত্যা মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে এমন জবানবন্দি দিয়েছেন তানিয়া নামের এই প্রত্যক্ষদর্শী। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তানিয়া এই মামলার প্রধান আসামি হাসান মাহমুদ ওরফে হাসানের স্ত্রী। আসামি হাসান ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী হাসান একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোন মেরামতের কাজ করে। ২০১১ সালে হাসানের সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজধানীর দক্ষিণ পীরেরবাগের ভাড়া বাসায় আমাদের নিয়ে আসে। আমাদের ভাড়া বাসাটা দুই তলা বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর টিনশেডের তৈরি। আমাদের সংসারে দুটি মেয়ে আছে। কিছুদিন পূর্ব থেকে আমার স্বামী হাসান নেশা করত বলে আমি বুঝতে পারি। ঘটনার দিন ১৯ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় আমি আমার দুই মেয়েসহ নিজ ঘরে ঘুমাতে যাই। ওই সময় আমার স্বামী হাসান ও তার বন্ধু মানিক ঘরের বাইরে ছাদের উপর মাদুর বিছিয়ে বসে গান শুনছে এবং সিগারেট খাচ্ছে। এর কিছু সময় পরই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি যে, আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে একজন লোককে লক্ষ্য করছে। তখন আমার স্বামীর হাতে থাকা কালো রঙের একটি পিস্তল দিয়ে দুইটি গুলি করছে। গুলি লাগার পর গুলিবিদ্ধ ওই লোকটি বলে, স্যার আমাকে বাঁচান। আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতর চলে যাই। ওই সময় আরও কয়েকটি গুলির শব্দ শুনি। আমার স্বামী ও মানিক ছাদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি হাসান যে লোকটিকে গুলি করছে সে একজন পুলিশের লোক এবং গুলিবিদ্ধ লোকটি মারা গেছে।’ মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. জালালউদ্দিন হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৬ মে দিন ধার্য করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল হক মামলার এজাহারটি গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেছেন। এর আগে সোমবার গভীর রাতে পীরেরবাগে ডিবির পল্লবী জোনাল টিমের একটি দল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায়। সেখানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে পরিদর্শক জালালউদ্দিনসহ দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে জালালউদ্দিন মারা যান। এ ঘটনায় বুধবার রাতে মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক শামীম আহমেদ। নিহত পুলিশ পরিদর্শক মো. জালালউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে।