শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোচিং ব্যবসা রমরমা

ট্রেড লাইসেন্স বাতিল থাকলেও যত্রতত্র শাখা খুলে বাণিজ্য

আকতারুজ্জামান

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে ২ এপ্রিল। আর শেষ হবে ১৩ মে। ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষায় বসার অনেক আগেই তাদের নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠেছে রাজধানীতে অবস্থিত কোচিংবাজ ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ‘প্রস্তুতি কোচিং’ নামে তারা ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৬টি কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করলেও কোচিং মালিকরা বন্ধ রাখেননি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাঁচা টাকার এই ব্যবসা। সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেদার ছাত্রছাত্রী ভর্তি অব্যাহত রেখেছেন তারা। আর কোনো কোনো কোচিং সেন্টার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সারা দেশে তাদের শাখা বরাদ্দ দিচ্ছে। সব মিলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠেছে কোচিংবাজ চক্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা নিয়ে ব্যবসার অভিযোগ ওঠা কোচিংগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সারা দেশে শাখা খুলে বসেছে কয়েকটি।

গ্রিন রোডে একটি কোচিং সেন্টারের হেড অফিসে সরেজমিন দেখা গেছে, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখায় কোচিংয়ের জন্য যথাক্রমে ১৬, ১৫ ও ১৭ হাজার টাকায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এ তিন শাখায় ক্লাস করতে চাইলে একজন ভর্তিচ্ছু থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন কোচিংটির ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে কোচিংটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কবির হোসাইন খান এই             প্রতিবেদককে বলেন, ইউসিসির পক্ষ থেকে রিট করার পর ট্রেড লাইসেন্স ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচিং ব্যবসায় জড়িত এই কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ (কারওয়ানবাজার) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম অজিয়র রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেই। কোচিংয়ের কার্যক্রম বন্ধই থাকবে। তিনি আরও বলেন, কেউ চুপিসারে বেআইনিভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রিন রোডে আরেকটি কোচিংয়ের হেড অফিসে গিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি কোচিং করতে তারা ১৬ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এই কোচিংটিরও ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার তালিকায় আরও রয়েছে ইউনিএইড, আইকন, আইকন প্লাস, ওমেগা ও প্যারাগন কোচিং সেন্টার। আইকন কোচিংয়ের নির্বাহী ম্যানেজার নুরুল ইসলাম মুরাদ বলেন, ‘আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আমরা ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’ বিজ্ঞান বিভাগে কোচিংয়ের জন্য ইউনিএইড নিচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। ব্যবসায় শাখায় নিচ্ছে ১৬ হাজার টাকা। ট্রেড লাইসেন্স ফিরে না পাওয়া কোচিং সেন্টারগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস হওয়া না হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, তারা এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ভর্তি করলে তা হবে বেআইনি।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র ভর্তির জমজমাট ব্যবসা খুলে বসেছে একটি কোচিং। প্রতি শিক্ষার্থীকে ১৯ হাজার টাকা দিয়ে এখানে ভর্তি হতে হচ্ছে। এই কোচিং সেন্টারটিও সারা দেশে শাখা বিক্রির ব্যবসা খুলেছে। জানা গেছে, সারা দেশে ৩৬টি শাখা রয়েছে তাদের। রাজধানীতেই রয়েছে ১৯টি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিংগুলোর মধ্যে ফোকাসের বিরুদ্ধেও রয়েছে শাখা বিক্রির অভিযোগ। বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এর শাখা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে কোচিংটি আদায় করছে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা। সাফল্যের ধুয়া তুলে মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ের ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা করছে বিশেষ একটি কোচিং সেন্টার। কোচিংটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা করে। অন্য একটি কোচিং মেডিকেলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ১৭ হাজার টাকা করে। ছাত্রছাত্রীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করলেও কোচিং শিক্ষকদের তারা পরিশোধ করছে নামমাত্র টাকা। আর পুরো টাকাই কোচিংবাজ ব্যবসায়ীরা পকেটে পুরছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গতকাল বলেন, শিক্ষা আইনে এসব কোচিং সেন্টার বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ক্যাবিনেটে কমিটির হাতে রয়েছে। সেখানে পর্যালোচনার পর ক্যাবিনেটে তা উত্থাপন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর