শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

সাখাওয়াত কাওসার ও আলী আজম

প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। খুন-ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধের রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী গ্রেফতারে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা সফলতা পাচ্ছে। আর এ কারণে উন্নত দেশের আদলে বাংলাদেশেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রায় প্রতিটি বিভাগেই সংযোজন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিন দিন এগিয়ে নিচ্ছে। ফলে এসব প্রযুক্তি জনগণকে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অভ্যন্তরীণ কাজেও গতি আনছে।

সর্বশেষ চালু করা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। এই নম্বরে ফোন করে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ  মানুষ। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে   এ সেবাটি। উন্নত বিশ্বের মতোই  এ সেবাটি কাজ করছে। মোবাইল  ও টেলিফোনে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি  ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে এ সেবাটি নেওয়া  যাবে। গেল তিন মাসে এ সেবাটি পেতে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৮টি কল করে গ্রাহকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় অপরাধেও এসেছে বৈচিত্র্য। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশে আধুনিক প্রযুক্তি, যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ব্যবহারের বিকল্প নেই। তাই প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হচ্ছে দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ। পুলিশ-র‌্যাব ছাড়াও প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে দেশের কারাগারগুলোতেও। মোবাইল অ্যাপস: অপরাধ সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, বোমা ও বিস্ফোরক সংক্রান্ত অস্ত্র ও মাদক বিষয়ক তথ্য, সাইবার ক্রাইম ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘বিডি পুলিশ হেল্পলাইন’, ‘হ্যালো সিটি’ ও ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ নামে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। এতে দ্রুততম সময়ে পুলিশি সেবা নিশ্চিত হবে। পস মেশিন: চলমান সব ধরনের গাড়ির মামলা-জরিমানা ডিজিটাল পয়েন্ট অফ সার্ভিস (পস) মেশিনে করা হচ্ছে। মামলার পর তাত্ক্ষণিকভাবে রাস্তাতেই গ্রাহকরা ব্যক্তিগত ইউক্যাশ এবং ইউক্যাশ পয়েন্টের মাধ্যমে পস মেশিনে জরিমানা পরিশোধ করতে পারবেন। এতে করে পুলিশের কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি উন্নত সেবা পাচ্ছে গ্রাহকরা। অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: ভিসার আবেদন, বিদেশে ভিসা/পাসপোর্ট রিনিউ করা অথবা গ্রিন কার্ড/ওয়ার্ক পারমিটের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন। সেবা প্রত্যাশীদের উন্নত ও দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ চালু করেছে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সেবা। এ পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার ৬১৯টি সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়েছে। অফিস অটোমেশন: ওয়ান স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স শাখায় পৃথক ডাটাবেইজের মাধ্যমে বিদেশগামী নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। অনলাইনেই এখন যে কেউ ফরম পূরণ করে তা জমা দিতে পারেন। এর বাইরেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের মজুত তাত্ক্ষণিক নিরূপণ করা এবং পেরোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দ্বারা গেজেটেড কর্মকর্তাদের এবং নন গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়মিত মাসিক বেতন রোল তৈরি করা হচ্ছে। আন্তঃবিভাগগুলোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সব থানা, ডিসি অফিস, মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস অফিস রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। আন্তঃশাখা যোগাযোগের জন্য ইন্ট্রামেইল সংযোগ চালু রয়েছে।

সিডিএমএস: পুলিশের তদন্তের গুণগতমান উন্নয়নে অপরাধী ও অপরাধ চিহ্নিতকরণ ও উদ্ঘাটনে কার্যকর ভূমিকা পালনকারী ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফট্ওয়্যার।

সিআইএমএস: বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) সফটওয়্যার চালু করেছে পুলিশ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতি সহজেই অপরাধী এবং অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

ডাটা রিকভার ফরেনসিক ল্যাবরেটরি: ডাটা পুনরুদ্ধারের জন্য সিআইডি, ডিএমপি ও র‌্যাবের অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। তথ্যাদি উদঘাটনে ডাটা রিকভার ফরেনসিক ল্যাবরেটরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সিটি সারভিলেন্স সিস্টেম: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃক পরীক্ষামূলকভাবে মহানগরীতে প্রবেশের ১৪টি পথে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করছে বা বের হচ্ছে- এরকম গাড়ির প্লেট নম্বরসহ অবস্থান ড্যাটাবেজে জমা হচ্ছে।

সিসিটিভি মনিটরিং: সমগ্র ঢাকা মহানগরীতে ও প্রত্যেকটি প্রবেশ এবং বহির্গমন পথে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন অ্যান্ড ফাইন পেমেন্ট সিস্টেম: যানবাহন চলাচল ব্যবস্থা স্বাচ্ছন্দ্যময় করার লক্ষ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন অ্যান্ড ফাইন পেমেন্ট সিস্টেম পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ট্রাফিক জরিমানার অর্থ আদায়ে ‘ইউ-ক্যাশ’ চালু রয়েছে। মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, ডেবিট কার্ড ও অন্যান্য ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে জরিমানার অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি প্রক্রিয়াধীন।

লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সার্ভিস: এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে হারানো বা চুরি সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সাধারণ ডায়রির (জিডি) জন্য আবেদন করা যাবে। এই সফটওয়্যারের সঙ্গে এনআইডি ও মোবাইল নম্বর ইন্টিগ্রেশন করা হবে। সেবাটি চালু করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

ফেসবুক পেইজ: জনমুখী পুলিশিং নিশ্চিত করা এবং জনমনে বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। এ পেইজের মাধ্যমে পুলিশের ইতিবাচক সংবাদ, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করা হচ্ছে।

পুলিশের ইউটিউব চ্যানেল: ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের ভিডিও নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে। এটা বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমকে আরও বেশি জনমুখী হয়ে উঠতে সহায়তা করছে।

ওয়েববেইজড প্রিজনভ্যান: কারাগারে বন্দী পরিবহনে সংযোজিত হয়েছে ওয়েববেইজড প্রিজন ভ্যান। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে বন্দী ছিনতাইয়ের পরই এটি চালু করে কারা কর্তৃপক্ষ। খুব শিগগিরই এটি পুলিশও চালু করবে।

র‌্যাব-প্রিজন ইনমেইট ডাটাবেজ: অপরাধীদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের মণির স্ক্যানিংসহ ২০০ ধরনের তথ্য সংবলিত ডাটাবেজ চালু করেছে র‌্যাব ও কারা কর্তৃপক্ষ। খুব শিগগির এটা পাসপোর্ট অধিদফতরের এমআরপি ডাটাবেজের সঙ্গেও যুক্ত হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ডাটাবেজে সংযুক্ত হবে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর