সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্যাশলেস ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে

মানিক মুনতাসির

ক্যাশলেস ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে

ডা. মিনহাজ। একজন চিকিৎসক। প্রতি মাসের বেতনের টাকা তুলতে চেকের পাতা নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যে কোনো অঙ্কের খরচ করেন ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। দিনভর রোগী দেখে ভিজিটের টাকা নিয়ে ব্যাংকের ড্রপ বক্সে জমা করে দেন সহকারী। দৈনন্দিন বাজার কিংবা অন্য কোনো কেনাকাটায় ওয়ালেট ভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে যেতে হয় না। চেম্বার শেষ করে বাসায় ফেরার পথে চেইন শপে ঢুকে ব্যাগ ভর্তি বাজার করেন। আর বিল পরিশোধ করে ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে। শুধু তাই নয় ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতনও পরিশোধ করেন কার্ডের মাধ্যমে। হাসপাতালের নিজের চিকিৎসার ব্যয়ের বিলও পরিশোধ করেন কার্ড দিয়ে। এটা শুধু একজন চিকিৎসকের বেলায় নয়। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংকার এমনকি ব্যবসায়ীদের মাঝেও এখন নগদ টাকার ব্যবহার হয় না আগের মতো। এভাবেই ক্যাশলেস লেনদেনের বিপ্লব ঘটছে নীরবে। এমন অবস্থা শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়। বরং বিভাগীয় এবং জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক থানা ও উপজেলায়ও শুরু হয়েছে এমন ক্যাশলেস লেনদেন। এতে বাড়ছে কার্ডের ব্যবহার। কমছে কাগুজে চেকের ব্যবহার। এদিকে দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) ব্যাংকিংয়ের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সেই ধারণা কাজে লাগিয়েই দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ শতাংশই এখন ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। গত ১০ বছরে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচারও হয়েছে। কিন্তু প্রশংসার দাবিদার অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা যেন নীরব এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে। সত্যিই ঘরে ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং আর এজেন্ট ব্যাংকিং। শুধু তাই নয়, ঘরে বসে ব্যালেন্স দেখা এবং ক্যাশ ট্রান্সফারের মতো কাজও হচ্ছে ব্যাংকে না গিয়েই। এ ছাড়া দুর্গম পাহাড়ি ও চরাঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে বিদেশ থেকে স্বজনের পাঠানো টাকার জন্য প্রিয়জনকে অপেক্ষায় থাকতে হয় না দিনের পর দিন। জরুরি প্রয়োজন টাকা উত্তোলন কিংবা জমার ক্ষেত্রে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন হয় না। বুথে ঢুকে ড্রাপ বক্সে জমা করা যায় মুহূর্তেই। ফাস্টট্রাকের মাধ্যমেই ক্রেডিট কার্ডের বিল, কিংবা গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধও জীবনকে করেছে আরও সহজ। এ ছাড়া এটিএম সেবা চালু হয়েছে আরও এক যুগ আগেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঞ্চয়ে উৎসাহী করতে চালু করা হয়েছে স্কুল ব্যাংকিং। কৃষক তার ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন ১০ টাকায় খোলা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। বিধবা, বয়স্কসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতাও বিতরণ করা হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর শাখা খোলার ক্ষেত্রে গ্রাম এবং শহরের অনুপাত প্রায় সমান হয়ে গেছে। অর্থাৎ ব্যাংকিং সেবাকে গ্রামমুখী করতে শহরের পাশাপাশি গ্রামমুখী হচ্ছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক মিলে মোট ব্যাংক রয়েছে ৫৯টি। শহরের চেয়ে গ্রামেই এখন ব্যাংকের শাখা বেশি। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অভাবনীয় পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিকায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ধারায় গ্রাহকসেবা ও চাহিদা পূরণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গতিশীল ভূমিকা রাখছে। সরকারি ব্যাংকগুলোও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে গ্রাহকসেবা আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারি চাকরিজীবীরাও এখন বেতনের টাকা তোলেন এটিএম বুথ থেকে কার্ডের মাধ্যমে। কোনো ব্যাংকেই আগের মতো টাকা তুলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই গ্রাহকরা দ্রুত ব্যাংকিংসেবা পাচ্ছেন। অনলাইন পদ্ধতিতে যে কেউ এখন এটিএম (অটোমেটেড টেলর মেশিন) সেবার আওতায় যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো অঙ্কের টাকা তুলতে পারেন। তেমনি জমাও দিতে পারেন ড্রপ বক্সের মাধ্যমে। অর্থনীতির এই উৎকর্ষের ফলে কমছে দারিদ্র্য। বাড়ছে মানুষের গড় আয়। সহজ হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। ফলে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে সাড়ে ২৩ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার এখন ১২ দশমিক ১ শতাংশ। মোট দেশজ আয় (জিডিপি) ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার।

সর্বশেষ খবর