সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা-কাঠমান্ডু গাড়ি চলবে শিগগিরই

৪ এপ্রিল ভারত হয়ে নেপাল যাবে বাংলাদেশি গাড়ি

রুহুল আমিন রাসেল

আর খুব বেশি দেরি নয়। শিগগিরই ঢাকা থেকে গাড়িতে চড়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা। হিমালয়কন্যা দেখার আগে সড়কপথে ভারতের শিলিগুড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। তাই আকাশে উড়ে যারা নেপাল যেতে চান না, তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরেকটু সময়। এই লক্ষ্যে আগামী ৪ এপ্রিল প্যাসেঞ্জার ট্রায়াল (যাত্রী পরিবহন) হিসেবে শিলিগুড়ি হয়ে কাঠমান্ডু যাবে বাংলাদেশি গাড়ি। ফলে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দ্বার খুলবে অপার সম্ভাবনার।  জানা গেছে, ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু সড়কপথে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা-কাঠমান্ডু সড়কপথে আগামী ৪ এপ্রিল প্যাসেঞ্জার ট্রায়ালের (যাত্রী পরিবহন) উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মোছাম্মাৎ ফারহানা রহমান স্বাক্ষরিত একটি পত্র ১৯ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেন। ওই পত্রে বলা হয়, বিবিআইএন মোটর ভেহিকলস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বা মোটরযান চলাচল চুক্তির আওতায় আগামী ৪ এপ্রিল প্যাসেঞ্জার ট্রায়াল (যাত্রী পরিবহন) রানে ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা এবং পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ী বন্দর দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে পানির ট্যাংকি বন্দর ব্যবহার করে নেপালের কাঁকরভিটা বন্দর থেকে দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে পৌঁছাবে। এতে অংশ নিতে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতরসমূহের প্রতিনিধিদের মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে ওই পত্রে। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব চন্দন কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা-কাঠমান্ডু সড়কপথে প্যাসেঞ্জার ট্রায়ালের (যাত্রী পরিবহন) একটি প্রাথমিক তারিখ আগামী ৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা আছে। এটা লক্ষ্য রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আগামী ২৭ মার্চ নেপাল ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্স হবে। এর পরই চূড়ান্তভাবে প্যাসেঞ্জার ট্রায়ালের তারিখ নির্ধারণ হবে। এরপর বিবিআইএনের প্রটোকল স্বাক্ষর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। আশা করছি তা শিগগিরই হবে।’ তথ্যমতে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের যৌথ উদ্যোগ বিবিআইএন নামে পরিচিত। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এই চার দেশের মধ্যে বিবিআইএন মোটর ভেহিকলস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বা মোটরযান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৫ সালের জুনে। পরে এই চুক্তি বাস্তবায়নে ধীর চলো নীতি অনুসরণ করে আসছে ভুটান। দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তির অনুমোদন দেয়নি। তাই ভুটানকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে গাড়ি চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে তিন দেশের সরকার। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল পরস্পরের সড়কপথ ব্যবহার করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করতে পারবে।

এদিকে বিবিআইএনের আওতায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিদেশীয় ট্রানজিটে সম্ভাবনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন বাংলাবান্ধা ত্রিদেশীয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি চালু হলে তিন দেশের মানুষ স্বল্প খরচে স্থলপথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলাচল করতে পারবেন। পর্যটকদের পাশাপাশি বাংলাদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য নেপালের শিক্ষার্থীদের আগমনও অনেক বাড়বে। এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ এবং ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাটস ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত সর্বশেষ ২০১৪ সালের যৌথ গবেষণায়।

তিন দেশের সঙ্গে সংযুক্ত স্থলবন্দরগুলোর ওপর পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) দেশগুলোতে ৫০০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। সেই বিবেচনায় ত্রিদেশীয় ট্রানজিট হলে ১০ বছরে বাংলাবান্ধা দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দরে পরিণত হবে। পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করে তিন দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা, ভারতের ফুলবাড়ী ও নেপালের কাঁকরভিটা স্থলবন্দরে আন্তবাণিজ্য বাড়বে। এতে বাংলাবান্ধা ১০ বছরে দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দরে পরিণত হবে। একই সঙ্গে নেপাল চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কয়েকগুণ বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হতে পারে বাংলাবান্ধা। তাই সেখানে ভর্তুকি দিয়ে হলেও উন্নত অবকাঠামো করতে হবে।

উন্নয়ন সমন্বয় এবং ক্যাটসের গবেষণায় বলা হয়, বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাঁকরভিটা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। আর ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর মোট দূরত্ব ১১৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধার দূরত্ব ৪৯৮ কিলোমিটার। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত সে দেশের স্থলবন্দর কাঁকরভিটার দূরত্ব ৬০০ কিলোমিটার। বাকি ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে আছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত ভারতের ফুলবাড়ী ও নেপালের সঙ্গে সংযুক্ত সে দেশের স্থলবন্দর পানির ট্যাংকি।

সর্বশেষ খবর