সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

স্বর নকলে পারদর্শী সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

স্বর নকলে পারদর্শী সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি

বুলবুলি আমাদের দেশে খুবই পরিচিত একটি পাখি। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই চিরচেনা পাখিটি, যার মাথায় ঝুঁটি, লেজ ও দেহের নিচে টকটকে লাল ছোট বাদামি রঙের একটি পাখি। তবে চিরচেনা এই বুলবুলির বাইরেও রয়েছে আরও অনেক প্রজাতির বুলবুলি। যাদের পরিচয় আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এমনই একটি পাখি সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি। ইংরেজি নাম Golden-fronted Leafbird। এরা অন্য পাখির স্বর নকল করতে পারে। আর নামে বুলবুলি হলেও আসলে এরা বুলবুলি নয়। এদের আকৃতিগত দিক থেকে বুলবুলিদের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। আর শরীরের রং কচি পাতার মতো সবুজ। মাথায় সোনালি রং থাকায় এদের নাম সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি, কোথাও পাতা বুলবুলি, সবুজ পাতা বুলবুলি কোথাওবা এরা সোনা-কপালি হরবোলা নামেও পরিচিত। এরা  ক্লোরোপসিডি (Chloropseidae) পরিবারভুক্ত পাখি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও চীনের দক্ষিণাঞ্চল এদের প্রধান আবাসস্থল।

সোনালি কপাল পাতা বুলবুলির তিনটি উপ-প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। এরা হচ্ছে— aurifrons aurifrons (গলা ও বুক নীল), aurifrons frontalis (গলা ও বুক কালো, আকারে বড়) এদের দক্ষিণ ভারতে দেখা যায় ও  aurifrons insularis (গলা ও বুক কালো, তুলনামূলক ছোট) এদের দেখা যায় শ্রীলঙ্কায়। গত ৩ মার্চ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এই পাখির দেখা পান শ্রীমঙ্গলের শৌখিন ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজম। খোকন  থৌনাউজম বলেন, পাখিটির গায়ের রং গাছের সবুজ পাতার মতো থাকায় তাদের খুঁজে বের করতে খুব কষ্ট হয়। সৌল (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টর লাইফ) এর নির্বাহী পরিচালক তানিয়া খান বলেন, সম্পূর্ণ সবুজ এ পাখির কপাল উজ্জ্বল কমলার সঙ্গে সোনালি। আবার একটু লালচে রং রয়েছে। ঈষৎ বাঁকা কালো ঠোঁট। চোখ, গলা ও বুক কালো। আর মাঝখানে গলায় বড় নীলের ছোপ। চোখের পেছন থেকে সারা বুকের কালো জায়গাটাকে ঘিরে রাখে একটি প্রশস্ত হলুদ বন্ধনী। ডানায় রয়েছে যিকঞ্চিৎ আসমানী ছোপ। চোখের রং গাঢ় বাদামি। পা এবং পায়ের পাতা কালো। স্ত্রী পাখির গলা ও বুকে কেবল নীলাভ গোঁফ-ডোরা, সোনালি রং পুরুষের চেয়ে হালকা। এরা দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৯ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষ পাখি প্রায় ৩০ গ্রাম ও স্ত্রী পাখি প্রায় ২৫ গ্রাম। জানুয়ারি থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। এরা গাছের মগডালের সরু ডালে কাঠি, পাতা, ঘাস ও মস দিয়ে বাটির মতো পরিপাটি করে বাসা বাঁধে। স্ত্রী পাখি ওই বাসায় দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হয় ক্রিম রঙের। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দেয়। ১৪ থেকে ১৫ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়। আর ডিম ফোটার ৬ দিন পর ছানাদের চোখ ফোটে। বাচ্চাগুলো ১৩ দিন পর বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। বাচ্চাগুলো পুরোপুরি সবুজ। সোনালি কপাল পাতা বুলবুলি চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন এবং গাছপালাপূর্ণ স্থানে থাকতে ভালোবাসে। এদের  গ্রাম এলাকা থেকে বনেই বেশি দেখা যায়। এরা সাধারণত একাকী বা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। পরগাছায় বা ফুলে ফুলে এবং পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়ায়। মধু, ফল এবং পোকামাকড বিশেষ করে শুঁয়োপোকা খায়। আবার  কখনো অন্য পাখিদের সঙ্গে মিলে খাবারের জন্য গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। এরা মাটিতে খুব কমই নামে। তবে এরা বেশ আগ্রাসী স্বভাবের। তারা নিজের এলাকা সম্পর্কে বেশ সচেতন। স্ত্রীর তুলনায় পুরুষরা বেশি আগ্রাসী। পাতার রঙে গায়ের রং হওয়ার এদের সহজে দেখা যায় না। এরা প্রায়ই শব্দ করে চলে। ডাক শুনে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর