বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

উদীয়মান হিসেবে ব্র্যান্ডিং হবে বাংলাদেশের

—নিজাম চৌধুরী

উদীয়মান হিসেবে ব্র্যান্ডিং হবে বাংলাদেশের

বেসরকারি খাতের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেছেন, উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে নতুন করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করায় এখানে বড় বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, এমন বার্তা বিশ্ববাসী পাবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও উত্তরণের জন্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। নিজাম চৌধুরী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো হলো, বর্তমানে এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা পায়, সেগুলো সংকুচিত হয়ে যাবে। এলডিসি হিসেবে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্বসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান থেকে আমাদের অব্যাহতি রয়েছে। এও বন্ধ হবে নির্ধারিত সময়ের পরে। উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়। যেহেতু এলডিসি হিসেবে এসব সুবিধা বাংলাদেশ পায়, এলডিসি না থাকলে তখন সুবিধাগুলো টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন যে জিএসপি সুবিধা দেয়, তা ২০২৭ সাল পর্যন্ত থাকবে। এরপর জিএসপি প্লাস পাওয়ার কথা রয়েছে। নিজাম চৌধুরী আরও বলেন, উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হলে প্রথমেই বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) ও উন্নত দেশ থেকে সরকারিভাবে প্রাপ্ত সহযোগিতা (ওডিএ) কমে যাবে। রপ্তানিতেও বড় ধরনের আঘাত আসবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বড় ধরনের ব্র্যান্ডিং হবে। এখানকার অর্থনীতি উদীয়মান, এখানে বড় বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, এমন বার্তা বিশ্ববাসী পাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের অন্যতম শর্ত হলো অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা-সূচকের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া। বাংলাদেশ এ শর্ত পূরণ করতে পারছে, এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেসব ঝুঁকি বা দুর্বলতা রয়েছে তা একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়েও কম। এ বার্তা বিনিয়োগকারীদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ওষুধশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি খাত হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে ট্রিপস চুক্তির আওতায় শর্ত শিথিল করে ২০৩৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত উন্নত বিশ্বে ওষুধ রপ্তানির সুযোগ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এ সুবিধা ভোগ করবে। বাকি সময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এ সুবিধা নিতে পারবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বাণিজ্য ক্ষেত্রে অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করবে। বাংলাদেশ ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। এ ছাড়া সরকার পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ যেসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা খুবই কম। তা বাড়াতে এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পোশাকশিল্প এখন একক রপ্তানিমুখী খাত। এ খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। জিএসপি সুবিধা হারানোর আগেই জিএসপি প্লাস পেতে উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া কমে যাবে, তাই এখন থেকে বিকল্প অর্থায়নের পথ খুঁজতে হবে।

সর্বশেষ খবর