শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফরিদপুরের ৬ নদীতে এখন চাষ হয় ধান

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে সব নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১৫তম পর্ব আজ প্রকাশিত হলো।

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরের ৬ নদীতে এখন চাষ হয় ধান

ফরিদপুরের ৬ নদ-নদী এখন ধান খেত। পানি থাকে না বলে এগুলো আবাদি জমি হয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা এসব নদ-নদী পলি পড়তে পড়তে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমেই নয়, বর্ষা মৌসুমেও এসব নদ-নদীতে তেমন একটা পানি থাকে না। ফরিদপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলো হচ্ছে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, বারাশিয়া, কুমার, চন্দনা ও মধুমতি। এগুলো এখন স্রেফ মরা খাল। একসময়ের প্রমত্তা পদ্মার বেশির ভাগজুড়ে বিশাল আকারে চর পড়েছে। এ নদী দিয়ে তখন বড় বড় জাহাজ চলাচল করলেও এখন ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নৌযান চলাচলের পথ তৈরি করতে হয়। পদ্মায় চর পড়ে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বাস্তবতায় এখন পদ্মার ফরিদপুর অংশের বিশাল চরজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। একই অবস্থা মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, বারাশিয়া নদ-নদীগুলোরও। আড়িয়াল খাঁর বেশির ভাগই এখন শুকিয়ে গেছে। যে নদের ভাঙনে একসময় সদরপুরবাসীর ঘুম হারাম হতো, সেই নদের বুকজুড়ে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। শুধু চাষাবাদই নয়, নদের বুকে তৈরি হচ্ছে স্থাপনাও। উৎসমুখে পলি পড়ায় এখন এ নদ দিয়ে কোনোরকমে নৌচলাচল টিকে আছে। একইভাবে মধুমতির বুক চিরে এখন ধু-ধু বালুচর। এ নদীটি এখন সরু খাল। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি খরস্রোতা নদী ছিল। কালের পরিক্রমায় পলি পড়ে দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে নদীটি।

প্রতিদিন এই নদীর বুক থেকে শত শত ট্রাক বালু কেটে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বছরের বেশির ভাগজুড়েই এ নদী পানিশূন্য থাকে। পলি পড়ার কারণে এ নদীর গতিপথ অনেকটাই পাল্টে গেছে। ফলে মানচিত্র থেকে একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে মধুমতি, বারাশিয়া, চন্দনা নদী।

ফরিদপুর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদ হচ্ছে কুমার। ডিক্রিরচর ইউনিয়নের টেপুরাকান্দি থেকে পদ্মার উৎসমুখ হয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা দিয়ে কুমার চলে গেছে গোপালগঞ্জ জেলায়। একসময় কুমার নদে চলাচল করত বড় বড় নৌকা-লঞ্চ। এসব নৌযান দিয়ে ফরিদপুর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় মানুষ যাতায়াত করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে কুমার এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদের বেশির ভাগ দখল হয়ে গেছে। প্রভাবশালী মহল কুমারের পাড় দখল করে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে। ফলে এ নদটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। একসময়ের খরস্রোত কুমারে একাধিকবার লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটলেও এখন তা অনেকের কাছে গল্প মনে হয়। দীর্ঘদিন ধরে দখল আর খনন না করার কারণে এ নদটিও তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। জেলার বেশির ভাগ কৃষকই একসময় এ নদের পানি দিয়ে সেচ সুবিধা পেত। কিন্তু সেই সুদিন আর নেই। কুমারের ফরিদপুর অংশের ৭৬ কিলোমিটারের বেশির ভাগজুড়েই এখন চাষাবাদ হচ্ছে। কুমারের গতিপথ রুদ্ধ করা হয় এরশাদ আমলে। নদের অম্বিকাপুর অংশে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় গতিপথ। সেই সময় থেকেই মূলত কুমার তার ঐতিহ্য হারাতে থাকে। বর্তমানে কুমার নদ দেখলে মনে হয় একটি মরা খাল। যদিও শহরবাসীর দাবি ও ফরিদপুর সদর আসনের এমপি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কুমার নদ খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমার খননে ২৪৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শুরু হবে। ফরিদপুরের মরা নদ-নদীগুলো খনন করে যৌবন ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুরবাসী।

সর্বশেষ খবর