মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দখল দূষণে শেষ হয়ে যাচ্ছে চিত্রা নদী

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১৯তম পর্ব আজ।

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

দখল দূষণে শেষ হয়ে যাচ্ছে চিত্রা নদী

ছোট বড় প্রায় ১০ নদী ছোট্ট জেলা নড়াইলকে ঘিরে মাটিকে দিয়েছিল উর্বরতা। ১০ নদীর একটি হলো চিত্রা নদী। যেটি নড়াইল শহরের বুক চিরে প্রবাহিত। এক সময় এই চিত্রা এতই খরস্রোতা ছিল যে, এর ঘোড়াখালীর বাঁকে প্রায়ই নৌকাডুবি হতো। অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে তখন চিত্রা নদীকে ব্যবহার করা হতো। অথচ লঞ্চ, স্টিমার, মাল বোঝাই নৌকা, আর বড় বড় জাহাজের অবিরাম বিচরণে মুখরিত থাকা সেই চিত্রা আজ নিথর নিস্তব্ধ। কারণ অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই গ্রাস করছে চিত্রাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, নাব্য হারিয়ে নড়াইলের ঐতিহ্যের ধারক চিত্রা নদী এখন  অস্তিত্ব সংকটে। যে ক্ষীণ স্রোতধারা টুকু বুকে নিয়ে চিত্রা এখনো প্রবাহমান আছে, নদী ব্যবস্থাপনার নামে বাঁধসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের ফলে তাও হারিয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত দখল আর পানি দূষণে বিপর্যস্ত নড়াইলের চিত্রা নদীকে পরিণত করা হয়েছে এক খালে। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও শীতে জেগে উঠে চর। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ। তখন সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর দুপাড়ের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। মিষ্টি পানির অভাবে এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রজাতির ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু দেশীয় মাছের ভাণ্ডার। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এ ছাড়াও নদীর দুপাড়ের দখলবাজদের উপর্যুপরি দখল-চিত্রাকে করছে আরও জীর্ণ। অনেকেই জানান, নদীর পানি পচে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পচা পানির বিরূপ পরিবেশে বিভিন্ন প্রজাতি ও আকৃতির মাছ মারা যাচ্ছে। বছরের পর বছর দূষণের এই ধারা অব্যাহত থাকার ফলে জীব বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যেখানে এক সময় জেলেরা জাল ফেলে  মাছ ধরত, আজ সেখানে সারা দিন জাল ফেলে মাছের দেখা মেলে না। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে চিত্রা-নবগঙ্গা সংলগ্ন খাল-বিল থেকে বিলীন হয়ে গেছে মহামূল্যবান গলদা চিংড়ি, রিটা, চেলেন্দা, চাপিলা, টাটকেনি, ভেটকি, পাঙ্গাস, পদ্মবাউস, বাচা, পাবদা, বাতাসী, বোয়াল, আইড়, চিতলসহ অংসখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদীপাড়ের সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে এই নদী রক্ষায় নেওয়া হোক সরকারি উদ্যোগ। নেওয়া হোক  দখলমুক্ত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ। তবে নড়াইলের জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, চিত্রার কোলে হিরণময়ী নড়াইল গড়ে তুলতে নদীর সঙ্গে টয়লটের সংযোগ বন্ধসহ দখল মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর