মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাত ব্যাংকিং

বিশ্বব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, ঝুঁকির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের। এই খাতের দুর্নীতি দমনে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নিতে হবে। আবার ঋণ আদায়ে আইনগত ও আর্থিক কাঠামোর উন্নতি করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আগারগাঁওয়ের বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ করা হয়। এ সময় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। জাহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে তারল্য সংকট না থাকলেও খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। আবার বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট আছে। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। এটি মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ। কয়েক বছর ধরে এই ঘাটতি নিরসনে বাজেটের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হচ্ছে। তার মতে, মুদ্রানীতি এখন সম্প্রসারণমূলক হয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী, সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বৃদ্ধি ও আমানত কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব উত্তরণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাতে ব্যাংকখাতে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটর পলিসি ৬ মাস পর পর দেওয়ার কথা কিন্তু এখন তারা আগেই দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন বিষয়ে প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৫ থেকে ৬.৬ শতাংশের মধ্যে। সংস্থাটি বলছে, দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, ক্রমাগত বাড়তে থাকা বাণিজ্যঘাটতি, ব্যাংক খাতের পরিবেশ, রেমিটেন্স আয়, মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য বৃদ্ধির চিত্র ও দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা হিসাব করলে এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা নয়। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে বেশি হতে বছরের শুরুতে যে প্রস্তুতি দরকার ছিল তেমন প্রস্তুতি দেখা যায়নি। সুতরাং প্রবৃদ্ধির হার কি করে সরকার ৭.৬৫ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও প্রশ্ন রয়েছে। দেশের ম্যাক্রো ইকোনমির ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও বিশ্বব্যাংক মনে করছে। এগুলো হলো— নীতিগত অনিশ্চয়তা, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা ও বিশ্ববাণিজ্যের অনিশ্চয়তা। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদি নীতি নির্ধারণ করা, নমনীয় মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করা ও প্রশাসনিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ানোসহ বেশকিছু সুপারিশও দিয়েছে তারা। জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বের যে কয়টি দেশ প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রপ্তানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রপ্তানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম।

 তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বিষয়টা এমনটা নয়। তিনি আরও বলেন, এটা ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেভাবে কর্মসংস্থান বাড়েনি। চলতি বছরে শহরগুলোতে তিন লাখ দরিদ্র বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেই দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে। জাহিদ হোসেন বলেন, বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫ অথবা ৬.৬ শতাংশ। আমাদের আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয় তবে বছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং রাজস্ব ঘাটতি। তাদের মতে মূল্যস্ফিতি স্থিতিশীলতায় কিছু সমস্যা রয়েছে। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে তখন খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে। আবার যখন খাদ্যতে বাড়ে তখন খাদ্য বহির্ভূতে কমে। এভাবে গড়ে স্থিতিশীল হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর