মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে উত্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামোতে বারবার অনুপ্রবেশ করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ গতকাল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। আইনের ৩২ ধারায় বলা হয় যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার তথ্য উপাত্ত, ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা বা করতে  সহায়তা করাটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ জন্য ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। আইনে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও জামিন অযোগ্যতার বিধানও রাখা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২০তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। উত্থাপিত বিলে ২১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রপাগাণ্ডা চালান বা তাতে মদদ দেন তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে সাত বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ২৭ ধারায়, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার অপরাধ বা সাইবার সন্ত্রাসের অপরাধ সংঘটনের দায়েও ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে তবে সেক্ষেত্রেও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে। ৩৪ ধারায় বর্ণিত হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধেও একই দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩০ ধারায় না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করে, তাহলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

২৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করে সুবিধা লাভের চেষ্টা করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েব সাইট বা অন্যকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ভীতি প্রদর্শণমূলক তথ্য সম্প্রচার করেন তাহলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা দশ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে,  তাহলে  ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ২৯ ধারায় মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৪৩ ধারায় পুলিশকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, মালামাল জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ নিরাপদ ব্যবহার আবশ্যক। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফলের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইবার অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। তাই জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল অপরাধসমূহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরাণ, তদন্ত এবং বিচারের উদ্দেশ্য আইন প্রণয়ন আবশ্যক।

সর্বশেষ খবর