মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড়জুড়ে উৎসব

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়জুড়ে উৎসব

রাঙামাটির পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে বইছে উৎসবের জোয়ার। বৈসাবির রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে পাহাড়। চারদিকে ভাসছে গানের সুর আর তরুণীদের নূপুরের ছন্দ। পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বসছে আনন্দ-উৎসবের জমজমাট আসর। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু অর্থাৎ বৈসাবিকে ঘিরে এ উৎসবের আয়োজন। বছর ঘুরে বৈসাবি এলেই ক্ষুুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা গানের সুর আর নাচের তালে তালে মেতে ওঠেন। পাহাড়ি পল্লীগুলোকে মুখরিত রাখে— ‘তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজেত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেরেবঙ বেক্কুন মিলিনে, এচ্চ্যা বিঝু, বিঝু, বিঝু’ সুর। যার অর্থ ‘তুরু তুরু তুরু রু বাঁশি বাজছে, পাড়ায় পাড়ায় বেড়াব সবাই মিলে, আজ বিঝু বিঝু বিঝু’। এটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসবের মূল গান। এবার উৎসবে পাহাড়ি-বাঙালি ছাড়াও যোগ দিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। ফলে ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনে পাহাড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। গতকাল সকালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু- অর্থাৎ বৈসাবির চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার এর উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখক ফোরাম ও জাকের সভাপতি শিশির চাকমা, রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা, চাকমা সার্কেল রাজ পুত্র ত্রিভুবন আর্যদেব ও বৈসাবি উৎসব উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইন্টু মনি চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে চাকমা, মারমা, খুমী, ম্রো ও চাক, বম, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়া, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষীণ করে রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এসে শেষ হয়। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ফুল বিজু, মূল বিজু, গোজ্জ্যাপোজ্জ্যা অর্থাৎ বাংলা নবর্বষ ও সাংগ্রাই অর্থাৎ জলোৎসব। মূলত আগামী ১২ এপ্রিল অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ আকাশে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে দেবী গঙ্গাকে ফুল উৎসর্গ করে শুরু করা হবে দিনব্যাপী ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। তার পর দিন অর্থাৎ মূল বিজু শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। এদিন চাকমারা-বিজু, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা-বিহু হিসেবে দিনব্যাপী উৎসব পালন করবেন। ১৪ এপ্রিল সারা দেশের সঙ্গে মিল রেখে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদযাপিত হবে বাংলা নবর্বষ। ১৯ এপ্রিল সকালে শুরু হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই অর্থাৎ জলোৎসব। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মারমা তরুণ-তরুণীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পানি ছিটিয়ে নেচে গেয়ে পার করবেন দিন। এর মধ্যেই চলবে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সংগীত, জুম খেলাধুলা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি-পণ্য প্রদর্শনী, বেইন বোনা প্রতিযোগিতা ও নাট্যোৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর