বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
একনেকে অনুমোদন

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই প্রকল্পে বরাদ্দ ১১৩১৭ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন  ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী জানান, মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে। বিভিন্ন দফায় সমন্বয় করে বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পারমাণবিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রকল্পের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজ (ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং বা এফসিপি) শুরু হয়েছে। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ৬৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন স্থাপন করছে সরকার। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভারী মালামাল নিরাপদে ও দ্রুত প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে নেওয়া এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য ‘সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অন্যদিকে ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার’ প্রকল্পে। প্রকল্প দুটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রী আরও জানান, ‘শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর জন্য নতুন করে ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। এর মধ্যে ব্রডগেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে ১৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার। এ বিষয়েও নতুন একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে’। নতুন ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনসহ দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ব্যয়ের বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানকার দুই ইউনিট থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন রেলপথ ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত নির্মিত হবে। এ ছাড়াও সাড়ে ৪ কিলোমিটার লুপ লাইন, একটি বি-শ্রেণির রেলস্টেশন, সাতটি কালভার্ট, ১৩টি লেভেল ক্রসিং ছাড়াও গেটসহ থাকছে সিগন্যালিং ব্যবস্থা। ঈশ্বরদীর ৩৭ নম্বর লেভেল ক্রসিং গেট থেকে পরিত্যক্ত পাইলট লাইন পর্যন্ত নতুন করে আরও ৯ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য রেলপথ সংস্কার করা হবে। প্রকল্প দুটি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো— টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও চট্টগ্রাম কালুরঘাটে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (প্রথম পর্যায়) শক্তিশালীকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান, মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গোবিন্দপুর এলাকা রক্ষা, নগর অবকাঠামো উন্নয়ন, খুলনা শহরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, কুমিল্লা জোনের জেলা মহাসড়কসমূহ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, নেত্রকোনা (ঠাকুরানা)-কলমাকান্দা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন, এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারা সড়কের ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও একটি কালভার্ট পুনর্নির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন, চাঁদপুর জেলার গৌরীপুর-কচুয়া-হাজীগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ এবং কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধনী)।

সর্বশেষ খবর