বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয় মনিটরিংয়ে কঠোর হচ্ছে ইসি

গোলাম রাব্বানী

একাদশ সংসদের ভোটের আগে-পরে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিংয়ে বিশেষ কমিটি ও অডিট করার উদ্যোগসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) দুই ডজন বিষয়ে সংশোধনী আনছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আসা প্রস্তাবগুলো থেকে আরপিও সংস্কারে ৩০-৩৫টি সুপারিশ কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হয়। সোমবার থেকে এগুলো পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার আবারও কমিশন বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রার্থী হতে করদাতার শণাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে মনোনয়ন জমা, ভোটের আগে-পরে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় কঠোরভাবে তদারকির বিষয়ে আইনি সংশোধন আনতে সম্মতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) প্রস্তাবিত সংশোধনী পর্যালোচনা করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সভায় সব সংশোধনীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, প্রস্তাবিত সুপারিশ  থেকে কমিশন ২০-২৫টি সংশোধনীর বিষয়ে আলোচনা করছে। বৃহস্পতিবারের কমিশন সভায় সার্বিক প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আইন-বিধি সংস্কার কমিটির একজন সদস্য জানান, অধিকাংশ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কয়েকটি সংশোধনীর বিষয়ে কমিশনের সম্মতি রয়েছে; কিছু বিষয়ে আলোচনা ‘পেন্ডিং’ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা   থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা; ১২ ডিজিটের টিআইএন নম্বর ছাড়া প্রার্থী হওয়া যাবে না (টিআইএন বাধ্যতামূলক); অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ দেওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজ না করার বিষয়ে কমিশনের অধিকাংশের সম্মতি রয়েছে। এ কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান আইনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ১% ভোটারের সমর্থন তালিকার বিধান রয়েছে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংসদে ১০০০ ভোটারের সমর্থন রাখার বিধান রাখতে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু তা সহজ না করে বিদ্যমান বিধি বহাল রাখার পক্ষে ইসি। নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিংয়ে সংশোধনীর পক্ষে মত রয়েছে কমিশনের। সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যয় তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন এবং  ভোটের পরে দাখিল করা রিটার্নের অডিটের ব্যবস্থা রাখতে আরপিওতে বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ রয়েছে কমিশনের। ইতিমধ্যে জামানতের টাকা বাড়ানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তিন বাম দল— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। জামানত বাড়ালে তাতে অংশ নেওয়ার আগে সিপিবিকে ভেবে  দেখতে হবে বলে কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাম এ দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সার্বিক সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে আগাম মন্তব্য করতে রাজি নন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন। কমিশনের সিদ্ধান্তের পর তা নিয়ে কথা বলবেন তিনি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করতে হবে। ইসির এসব সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাসের ওপরই নির্ভর করছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আরপিও সংশোধনে প্রস্তাবগুলো নিয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর তা পর্যালোচনা আইন পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে ‘খসড়া বিল’ প্রস্তত করে কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনুমোদন পেলেই বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। স্থায়ী কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে সংশোধনী বিল পাস হলেই চূড়ান্ত হবে আরপিও সংশোধন। 

১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ করা ও মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য  ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।

সর্বশেষ খবর