শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভুলে যাওয়া ইতিহাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন না রাকসু কি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাকসু কী? প্রশ্নটি করতেই কেউ বললেন, সেখানে নাচ-গান হয়। আবার কেউ ডাক বিভাগের কোনো কিছু বলেই জানেন। প্রশ্নটি যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এখন খুবই অপরিচিত। আর হবেই না কেন? সেই কবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হয়েছে, তা জানা নেই অনেকের।

ছাত্র সংগঠনের নেতারাও স্মরণ করেন স্মৃতি ঘেঁটে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় রাকসুর নামে টাকা নেওয়া হয় কিন্তু রাকসু নির্বাচন হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি দোতলা ভবন। ভবনটির অবস্থা প্রায় জরাজীর্ণ। ভবনের বাইরের দেয়ালে শেওলা জমেছে। মুছে গেছে নামটিও। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা না থাকায় দিনের আলোয় ভিতরে আবছা অন্ধকার ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। এ ভবনের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ঐতিহ্য, গৌরব, সংগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস। ভবনটি রাকসু ভবন। রাকসু নির্বাচন হয়নি দীর্ঘ ২৯ বছর। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে। কার্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভুলে গেছেন রাকসুর প্রকৃত অর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে যারা জানেন, রাকসুর কাজ কী? অধিকাংশ শিক্ষার্থীই রাকসু ভবনকে চেনেন গান-বাজনার (সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের) ভবন হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। ’৬২ সালে এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নামে যাত্রা করে। মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের নির্বাচন হয়। সরেজমিন দেখা গেল, রাকসু ভবনের বাইরে এই ভবনের নামের অস্তিত্ব নেই। ভিতরে ঢুকতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নাট্য সংগঠনের নাটকের মহড়া শোনা গেল। দ্বিতল রাকসু ভবনের প্রায় পুরোটাই জুড়ে নাচ-গান, নাটক, বিতর্কসংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়। ভবনের দ্বিতীয় তলায় রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিস। সাংস্কৃতিক কর্মীদের মহড়ার আওয়াজ ও বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং শব্দে দিনভর মুখরিত থাকে ভবনের চারপাশ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ভবনকে চেনেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভবন হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিলেন গণিত বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। ‘রাকসু কী?’ তাদের কাছে জানতে চাইলে কেউই বলতে পারলেন না। তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন সময় রাকসুর নাম শুনেছি। কিন্তু রাকসুর কাজ কী জানা নেই।’ পাশেই আড্ডা দিচ্ছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের ছয় শিক্ষার্থী। রাকসু ভবন চেনেন কিনা— এমন প্রশ্নে তাদের মধ্যে কেবল একজন চেনেন বলে জানালেন। প্রতিবেদক অন্যদের রাকসু ভবন চিনিয়ে দিলে তারা একে গান-বাজনার ভবন হিসেবে চেনেন বলে জানান। রাকসু ভবনের সামনেই কথা হয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সালের সঙ্গে। রাকসুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কিছু বলতে পারলেন না। তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় রাকসুর নাম জেনেছি। শুনেছি এটি শিক্ষার্থীদের সংগঠন। এর বেশি কিছু জানি না।’ রাকসু ভবনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছি এ ভবনে নাচ-গান, নাটকের রিহার্সেল হয়। মনে হয় এটা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অফিস।’ শিক্ষার্থীদের ‘অধিকার আদায়ের মঞ্চ’ রাকসু সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে যারা রাকসু সম্পর্কে বলতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবির উল ইসলাম কিঞ্জল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ থাকতে পারে, তা নতুন শিক্ষার্থীরা জানতে পারছেন না। এ সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। একটি প্রক্রিয়াকে নেই করে দেওয়া ও পাশাপাশি একটি অগণতান্ত্রিক অবস্থার সৃষ্টি করা, এটি হচ্ছে এ সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায় জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্বাচন হচ্ছে, অথচ শিক্ষার্থীদের নির্বাচন নানা অজুহাতে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কোনো সরকারই এই নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। রাকসু সচল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সুযোগ পাচ্ছে একলা চল নীতিতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাচন হলে ক্যাম্পাসে সংঘাত-সহিংসতা বাড়বে। এখনো নির্বাচনের পরিবেশ হয়নি। তবে তারা নির্বাচনের পক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা জানান, তারা এই নির্বাচনের পক্ষে। ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় এখন তাদেরই সব করতে হচ্ছে। তবে নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলেও নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

সর্বশেষ খবর