শিরোনাম
বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

জনস্বার্থ মামলার রায় বাস্তবায়নে অনীহা

প্রশাসন সেভাবে অ্যাকটিভ নয় যে, অটোমেটিকভাবে রায় বাস্তবায়ন করবে। তাই যারা মামলা করেন তাদের দায়িত্ব হলো বাস্তবায়নের জন্য তৎপর থাকা

আহমেদ আল আমীন

ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিপন্ন চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা রক্ষায় সীমানা চিহ্নিত করে পিলার স্থাপন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদী খনন ও পলি অপসারণ এবং নদীর তীরে বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। নদীগুলোর দখল, দূষণ ও নদীর অভ্যন্তরে স্থাপনা নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিটে এ রায় আসে। এরপর পেরিয়ে গেছে প্র্রায় ১০ বছর। কিন্তু এতদিনেও রায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এখন নাব্য হারিয়ে বুড়িগঙ্গার পানি নিকষ কালো, পচা ও দুর্গন্ধময়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনস্বার্থবিষয়ক এসব মামলার রায় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ ও ঔদাসীন্য রয়েছে। কখনো বাদীপক্ষের তৎপরতার অভাবে রায় ও নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না। জনস্বার্থবিষয়ক মামলার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি এ বিষয়ে বলেন, কিন্তু সরকার ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং আন্তরিকতার অভাবে জনস্বার্থবিষয়ক মামলার রায় ও নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, সাধারণভাবে আমাদের প্রশাসন সেভাবে অ্যাকটিভ নয় যে, তারা অটোমেটিকভাবে রায় বাস্তবায়ন করবে। তাই, যারা মামলা করেন তাদের দায়িত্ব হলো রায় বাস্তবায়নের জন্য তৎপর থাকা।

এমনই এক মামলায় কয়েক বছর আগে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাথ দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আদালতের আদেশে বলা হয়, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাথ বা রাস্তার ওপর বালু, রড বা যে কোনো পণ্য রাখা, ট্রাক, ভ্যানগাড়ি ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং করা এবং রাস্তার পাশের দোকানগুলোর পণ্য দিয়ে ফুটপাথ বা রাস্তা দখল করা বন্ধ রাখতে হবে। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিটের শুনানি শেষে এসব নির্দেশনা দেয় আদালত। কিন্তু ২০১২ সালের এ রায় এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে প্রায় প্রতিনিয়ত ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা যায়। হাঁটার পথে অনেকটা হঠাৎ করেই, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মোটরসাইকেল উঠে আসায় ভড়কে যান অপ্রস্তুত পথচারী। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি বিপাকে পড়েন। এ নিয়ে মোটরসাইকেল চালক ও পথচারীদের মধ্যে কখনো কখনো বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। রাস্তায় যানজটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হলেই সময় বাঁচানোর অজুহাতে মোটরসাইকেল উঠেপড়ে ফুটপাথে। এমনই প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের ৫ মার্চ ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলাচল রোধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। গত কয়েক দিনে সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাথে মোটরসাইকেল উঠে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতের আদেশ উপেক্ষার শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলাচল রোধে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, শব্দ দূষণ রোধে সারা দেশে গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। গত বছর হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। হাই কোর্টের আদেশে হাইড্রোলিক হর্নের উৎপাদনও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের আশেপাশে গাড়ির হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়। হাই কোর্টের এই আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যানজট ও ধুলাবালির এই ঢাকা শহরে গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণ ও পরিবহনের সময় পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, কখনোবা বিকালেও বর্জ্য অপসারণ করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বর্জ্যবাহী খোলা ট্রাক ও বাহন থেকে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাহনের আশেপাশে থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা নাক-মুখ চেপে পথ চলছে। এ বিষয়ে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দেয়। গত ১৬ অক্টোবর হাই কোর্ট ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহ করে ঢাকনাযুক্ত বাহনের মাধ্যমে তা অপসারণ ও পরিবহনের নির্দেশ দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে ঢাকনাযুক্ত বাহন ব্যবহারে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে হাই কোর্ট রুলও জারি করে। কিন্তু এখনো ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে আগের মতোই ঢাকনাবিহীন বাহন ও গাড়িতে বর্জ্য অপসারণের চিত্র চোখে পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, যে কোনো বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন জরুরি। জনস্বার্থবিষয়ক মামলার রায় বাস্তবায়ন আরও বেশি জরুরি। এসব রায় বাস্তবায়নে অনীহা প্রদর্শন কাম্য নয়। সবাইকে আদালতের রায় ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই সিনিয়র আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর