মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দখলদাররা গিলে খাচ্ছে নদী

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২৭তম পর্ব আজ।

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

দখলদাররা গিলে খাচ্ছে নদী

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা নদী ‘বাসিয়া’ দখল-দূষণে মরতে বসেছে। দুই পাশে গড়ে তোলা দখলদারদের অবৈধ স্থাপনায় সরু হয়ে গেছে নদীপথ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপির কতিপয় নেতা ও ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে দখল করেছেন নদী। এমনকি দখলে   পিছিয়ে নেই মসজিদ-মাদ্রাসাও। ধর্মীয় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে নদী দখল করেছেন কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া উপজেলা সদরের সকল প্রকার আর্বজনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদী। ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন নদীর দুপাশের ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তালিকা তৈরি করলেও অদৃশ্য কারণে চালানো হচ্ছে না উচ্ছেদ অভিযান। নদী রক্ষায় কোনো কাজে আসছে না জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপজেলা কমিটি।   অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাসিয়া নদী সিলেটের সুরমা থেকে উৎপন্ন হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৫৬ কিলোমিটার। প্রস্থ সর্বনিম্ন ১৯ মিটার, সর্বোচ্চ ১২৫ মিটার। বর্তমানে নদীর অধিকাংশই দখলদারদের পেটে। ২০১৬ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া হয়েছিল (৭ কিলোমিটার) নদী পুনঃখনন কার্যক্রম। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার কারণেই বাজার এলাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে লিখিত (স্মারক সি-২৮/৬৪৫, তাং ২৫.০৯.২০১৬ইং) জানায় তারা। আবেদনে পাউবি লিখেছে, ‘জরিপ নকশা মোতাবেক নদীর এলাইমেন্ট চিহ্নিত করে খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বাসিয়া নদীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরি।’ এদিকে উপজেলা প্রশাসনের তৈরি দখলদারদের তালিকায় দেখা যায়, নদীর উত্তর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ৮৭টি, দক্ষিণে ৮১টি, পশ্চিমে (সরিষপুর এলাকায়) ৫টি ও কালীগঞ্জ বাজার এলাকায় ৯টি। তালিকায় নাম রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতিপয় নেতা ও ব্যবসায়ীদের। রয়েছে দুটি মাদ্রাসা ও মসজিদের নামও। সূত্র জানায়, নদী খনন প্রক্রিয়া ও অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত হওয়ায় দখল টিকিয়ে রাখতে একাট্টা হয় দখলদাররা। এর মধ্যে দুজন দখলদার হাইকোর্টে রিট পিটিশন (মামলা- ৫৩৪০/২০১৭ইং) করেন। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আকতার বলেন, বাসিয়া নদী রক্ষায় অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরিসহ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছে বেলা।

 এখন অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা প্রশাসনের দায়িত্ব। তারা যদি কালক্ষেপণ করে দখলদারদের সুযোগ দেন তাহলে আর করার কিছু থাকে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে আমরা দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে উচ্ছেদ মামলা (৪/২০১৭ইং) দিয়েছি। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে।

 পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাসিয়া খনন প্রক্রিয়া আংশিক চলমান রয়েছে। বিশ্বনাথ বাজার এলাকার অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না হওয়ায়, ওইদিকে আমরা কাজ করতে পারছি না। এ বিষয়ে কথা হলে সিলেটের জেলা প্রশাসক নূমেরী জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাসিয়া নদীর সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর