ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা এক শিশু দাফন করার সময় নড়ে উঠেছে। গতকাল রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শিশুটি জীবিত ছিল। এ ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত শনিবার মধ্যরাতে ঢাকার ধামরাই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের গৃহবধূ শারমিন আক্তার (২০) প্রসব ব্যথা অনুভব করলে তাত্ক্ষণিকভাবে তাকে ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তখন চিকিৎসকরা ঘোষণা দেন শিশুটি মৃত। অর্থাৎ শারমিন মৃত বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। এ খবরে স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিশুটির বাবা মিনহাজ এ সময় সান্ত্বনার ভাষা হারিয়ে ফেলেন। সব কিছুর মধ্যেও ভালোবাসার চিহ্নস্বরূপ কন্যার নাম মীম রাখেন তারা। হাসপাতাল থেকে শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার ঘণ্টা দেড়েকে ঘটে যায় মিরাকল। দাফনের আগ মুহূর্তে হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠে শিশুটি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল তখন সাড়ে ৯টা। শিশুটির মামা শরিফুল ইসলাম ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর আজিমপুর কবরস্থানে শিশুটিকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। বেলা ১০টার দিকে কবরস্থানের দায়িত্বরত ইয়াসমিন বেগম নামে এক মহিলা শিশুটিকে গোসল করানোর সময় তার মামাকে জানান যে— শিশুটি বেঁচে আছে। বলেন, ‘গোসল করানোর সময় সে নড়ে উঠেছে।’ সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে আজিমপুর মেটারনিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এ খবরে অনেকটা নির্বাক হয়ে পড়েন মিনহাজ। কারণ একদিকে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে ঢামেকে ভর্তি থাকা স্ত্রীর চরম অসুস্থতা। যোগাযোগ করা হলে তিনি তাত্ক্ষণিক কোনো কথা বলতে পারেননি। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ বলেন, ‘শিশুটির বাঁচার আশা খুব ক্ষীণ। শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আমরা এখন আরেকটি মিরাকলের অপেক্ষা করছি। বাঁচার ক্ষেত্রে শিশুটির অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তার ওজনও কম, মাত্র এক কেজি। সে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না। তার শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রাও থাকছে না। এগুলো ঠিক রাখার জন্য তাকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের প্রথম লক্ষ্য শিশুটিকে বাঁচানো। এজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তাকে হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ কুমার পাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আমরা ঘটনাটি জেনেছি। এখন আমরা তদন্ত করে দেখব কীভাবে, কারা ওই শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করল।’