বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংক জালিয়াতির দরজা বন্ধ করতে হবে

—আলাউদ্দিন এ মজিদ, চেয়ারম্যান, বেসিক ব্যাংক

মানিক মুনতাসির

ব্যাংক জালিয়াতির দরজা বন্ধ করতে হবে

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেছেন, ব্যাংক জালিয়াতির সব দরজা বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নিজেদের স্বার্থেই এটা করতে হবে। এজন্য ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়কেই নৈতিক মর্যাদা ধরে রেখে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে যেসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে তার কারণ অনুসন্ধান করে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, কোনো পরিচালক বা রক্ষকের মাধ্যমে ব্যাংকের যেন কোনো ক্ষতি বা বদনাম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেলাপি হয়ে যেতে পারে এমন কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। ফলে ঋণ প্রস্তাবগুলো অধিক যাচাই-বাছাই করতে হবে। বড় কোনো কর্তাব্যক্তির রেফারেন্স থাকলেও ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো ঋণগ্রহীতা যেন নতুন করে খেলাপি না হন তাও দেখার দায়িত্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। এজন্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নজর দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারা শীর্ষ নির্বাহীদেরই ব্যর্থতা। এ দায় তাদেরই নিতে হবে। শুধু নিজেরা বড় বড় সুযোগ-সুবিধা নেবেন অথচ খেলাপি ঋণ আদায়ে ভূমিকা রাখবেন না তা হতে পারে না বলে মনে করেন বেসিক ব্যাংক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে এমন ঘটনাও ঘটছে যে পুরনো খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না বরং নতুন করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থা চলতে পারে না। এর দায়ও শীর্ষ নির্বাহীদের নিতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে; যা পরে অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোয় মূলধন ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে। আবার বাজেটের টাকা দিয়ে সে মূলধন ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। একে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। কারণ, বাজেটের টাকা মানেই হলো জনগণের টাকা। তবে সরকার চায় কোনো ব্যাংকই যেন রুগ্ন হয়ে না পড়ে। ফারমার্স ব্যাংক সংকটে পড়েছে। সেটা তো বেসরকারি ব্যাংক। তার পরও সরকার চাচ্ছে ব্যাংকটাকে উদ্ধার করতে। যে কোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখতে। এতে জনগণের আস্থার ভিত আরও শক্তিশালী হবে। পৃথিবীর অন্য দেশেও এটা হয়। এমনকি আমেরিকায়ও এমন ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান। সরকার নতুন আরও কয়েকটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আর কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কিনা— জানতে চাইলে আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, এর এখন কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ২০ থেকে ২৫টির বেশি ব্যাংক থাকার প্রয়োজন নেই। মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া মানে ব্যাংকের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলা নয়। বরং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে কমসংখ্যক ব্যাংক দিয়েও সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা সম্ভব। তিনি বলেন, শুধু ফারমার্স আর বেসিক বা অন্য দু-একটি ব্যাংকের অবস্থা বিবেচনা করে পুরো ব্যাংক খাতের অবস্থা বিবেচনা করা যাবে না। তবে ব্যাংক খাতে কিছু সমস্যা তো রয়েছেই। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ একটা বড় সমস্যা। আর তারল্য সংকট নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাংকের সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আরও ভালো পারফর্ম করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে ব্যাংকার ও গ্রাহকের নৈতিক সম্পর্কও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই এমডি।

সর্বশেষ খবর