শিরোনাম
শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কীর্তিনাশার বুকে চর আর চর

অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ৩১তম পর্ব আজ।

রোকনুজ্জামান পারভেজ, শরীয়তপুর

কীর্তিনাশার বুকে চর আর চর

শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর বিভিন্ন প্রান্তে জেগে উঠছে চর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দখল-দূষণ আর নজরদারির অভাবে একসময়ের প্রমত্তা নদী কীর্তিনাশার বুকজুড়ে এখন শুধু চরের সমাহার। এসব চর নদীপথকে খালে পরিণত করেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে কীর্তিনাশা নদীর উৎপত্তি। প্রায় ৩০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে কীর্তিনাশা মাদারীপুর সদর উপজেলার রাজারচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে গিয়ে মিশেছে। একসময় নদীটি খরস্রোতা ছিল। গভীর এ নদী দিয়ে সারা বছরই নৌযান চলাচল করত। নদীর দুই পাড়ে নড়িয়া ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা অবস্থিত। কীর্তিনাশা নদী দিয়ে একসময় নৌযানে করে জেলার বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র আঙ্গারিয়া, ভোজেশ্বর, নড়িয়া বাজারে পণ্য পরিবহন করা হতো। এ ছাড়া পালং, চিকন্দি, ষোলপাড়া, ডোমসার, বিঝারী ও ডগ্রি বাজারের বিভিন্ন পণ্যও এ নদী দিয়ে পরিবহন করা হতো। এসব পথে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পণ্যসামগ্রী নৌপথে আনা-নেওয়া করতে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ কম হতো। জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কীর্তিনাশা ও পদ্মা নদীর সংযোগস্থলে বালু জমে চর পড়ে যায়। তখন থেকেই সেখানে ছোট একটি নালার মতো সৃষ্টি হয়। ওই নালা দিয়ে সামান্য পরিসরে পানির প্রবাহ হতে থাকে। তখনো সেখান দিয়ে হালকা নৌযান চলাচল করতে পারত। এরপর গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ওই নালাটি দিয়ে পানির প্রবাহ কমতে থাকে। তারপর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এখন বৈশাখ মাস হলেও কীর্তিনাশা নদীর বুকজুড়ে কোথায়ও হাঁটুপানি, আবার কোথাও আরও কম পানি রয়েছে। নদীর বুকে চর আর চর থাকায় নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কৃষকরা জানান, তারা আগামী শীত মৌসুমে বোরো ধানের সেচের পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন। নদীতে চর পড়ে যাওয়ার কারণে এ বছর বোরো ধান চাষ করতে বিপাকে পড়েন কৃষকরা। নদীর বেশির ভাগ এলাকা জুড়েই চর জেগে উঠেছে। ভোজেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ও মধুসূদন পাল বলেন, ‘আমরা পণ্যসামগ্রী পাইকারি দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ট্রাকে বেশি খরচ দিয়ে পণ্যসামগ্রী আনতে হচ্ছে।’ শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘নদী ভরাট হয়ে গেলে জলাবদ্ধতা থেকে বন্যা হয়, নদীভাঙন দেখা দেয়। কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এসব বিবেচনায় নদীর নাব্য স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। কীর্তিনাশা একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি খনন করার জন্য আমরা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করার অনুমতি ও একটি কারিগরি কমিটি গঠন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছি।’ শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘কীর্তিনাশা নদী বালুতে যদি ভরাট হয়ে থাকে, তাহলে তা খননের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর