শিরোনাম
রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটে সরগরম দুই শহর

আজমত-মান্নান সমর্থকদের বরফ গলানোর চেষ্টা গাজীপুরে

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি, গাজীপুর থেকে ফিরে

আজমত-মান্নান সমর্থকদের বরফ গলানোর চেষ্টা গাজীপুরে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন তিনি। গাজীপুরের অলিগলিতে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন তরুণরা, যার বড় অংশই ভোটার নন। গণসংযোগে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সমর্থকদের তেমন একটা চোখে পড়েনি। যদিও আজমত উল্লা খান নিজে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষেও জোরালোভাবে মাঠে নামেননি বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান সমর্থকরা। কেন্দ্র আটঘাট বেঁধে মাঠে নামলেও গাজীপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলকে নিয়েও নানা সন্দেহ করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এখন আজমত উল্লা খান ও মেয়র মান্নান সমর্থকদের বরফ গলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীর সমর্থকদের অভিযোগ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খান, যুগ্মসম্পাদক মতিউর রহমান মতি, মহানগরের প্রভাবশালী নেতা কাজী আলিমুদ্দিন, অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন, যুবলীগের মহানগর আহ্বায়ক রাসেল সরকার, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা আন্তরিক হয়ে মাঠে নামেননি। এদের অনেকেই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চেয়েছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজাহার উদ্দিন ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি নিজের নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তার মতো অনেকেই কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের গণসংযোগে অনেকেই গলায় নৌকা প্রতীক ঝোলাচ্ছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডেও এ চিত্র দেখা গেছে। কার্ড ঝোলানো কম দেখা গেছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান সমর্থকদের। তবে তাদের নীরব ভোটব্যাংক রয়েছে বলেও অনেকের সঙ্গে একান্তে কথা বলে জানা গেছে। টঙ্গী আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনে হচ্ছে কুমিল্লা সিটির চিত্রই ফুটে উঠছে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের আগে বেশির ভাগ লোকের গলায় ঝোলানো ছিল নৌকা প্রতীকসংবলিত কার্ড। মিছিল-শোডাউনেও তা দেখা যায়। কিন্তু দিন শেষে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। ভোটে হেরে যায় নৌকা প্রতীক। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। গাজীপুরেও এমনটি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সবাই আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। কাউকে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব— ইনশা আল্লাহ।’ বিএনপিসূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি নেই। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগমুহূর্তে ১৫১ সদস্যের মহানগর কমিটি জমাও দেওয়া হয়। কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে গাছাড়া ভাবও রয়েছে। তবে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঠে নামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির এক নেতা জানান, মনোনয়ন না পেয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও অভিমানী হয়ে পড়েন এম এ মান্নান। তবে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মেয়র মান্নানকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বিএনপি সরকারে গেলে তাকে মন্ত্রী করা হবে। নানা আশ্বাসের পর কিছুটা বরফ গলেছে মান্নান সমর্থকদের। তার পরও পুরোপুরি সমর্থকরা এখনো মাঠে নামেননি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নানাভাবে বুঝিয়ে মাঠে নামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে গাজীপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলের ভূমিকাকে ‘রহস্যজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি কেন্দ্রকেও জানানো হয়েছে। তবে গতকাল তাকে মাঠে দেখা গেছে। এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ গোপনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলেও স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার জানালেন, ‘দলে কোনো সমস্যা নেই, কোনো কোন্দল নেই। বর্তমান মেয়রসহ নেতা-কর্মীদের সবাই আমার পাশে মাঠে নেমেছেন। সুতরাং দল নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আমি ভাবছি শুধু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যেভাবে গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে তাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।’

বিএনপি জোটের পাঁচ নেতা গ্রেফতার : নির্বাচন সামনে রেখে ২০-দলীয় জোটের পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি অবিলম্বে ধরপাকড় বন্ধ করে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। হতাশাগ্রস্ত আওয়ামী লীগ এখন অপপ্রচার ও নির্বাচনী মাঠে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে। ধরপাকড় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। ধানের শীষের মিডিয়া সেলের প্রধান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম অভিযোগ করেন, গাজীপুর ডিবি পুলিশ শুক্রবার রাত ৯টায় টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেটে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আটক করে মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আফজাল হোসাইনকে। রাত সাড়ে ১২টায় উত্তরার বাসা থেকে আটক করা হয় টঙ্গী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আকবর হোসেন ফারুককে।

 গাজীপুর সদর বিএনপির কানাইয়া গ্রাম কমিটির সভাপতি ও গ্রাম কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সোবহান ছাড়াও নির্বাচনী প্রচারকালে গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন টুলু ও সদর উপজেলা ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম উজ্জ্বলকে আদালতপাড়ায় পানির ট্যাংকি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তিনি অভিযোগ করেন, গাজীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডার, টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস জিয়াউল হাসান স্বপন, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন মরুসহ বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বাসাবাড়িতে রাতব্যাপী তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর