শিরোনাম
রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটে সরগরম দুই শহর

খুলনায় দুই দলে দুই সংকট

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

খুলনায় দুই দলে দুই সংকট

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবে হঠাৎই নানা কারণে ভোটের আমেজে ভাটা পড়েছে এই মহানগরীতে। কিছুদিন আগেও ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা থাকলেও এখন পাড়ায় মহল্লায় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের পদচারণা কমেছে। মেয়র প্রার্থীরা যেসব এলাকায় গণসংযোগ করেন, শুধু ওই এলাকাই কিছুটা সরগরম থাকে। গণসংযোগে লিফলেট বিতরণ হলেও রাস্তায় পোস্টার চোখে পড়ছে না। গত দুদিন খুলনা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য নির্বাচনে একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকে। এবারও শুরুর দিকে  সবার মধ্যে উৎসবের আমেজই কাজ করছিল। তবে গত কয়েকদিনে এই আমেজ কিছুটা কমে গেছে। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ তাদের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে। অন্যদিকে, এই নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে মূলদল ও ছাত্রলীগ সরাসরি মাঠে কাজ করলেও দলের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো নয়। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের উচ্চপদস্থ নেতারা মাঠে নামলেই সঙ্গে থাকেন কর্মীরা। নেতা না থাকলে কর্মীরাও মাঠে নেই। নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতে না পাড়ায় দলের বড় একটি অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া তার অনুসারীদের অনেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় নিজেদের প্রচার প্রচারণায়ই ব্যস্ত রয়েছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডেই যুবলীগের কমিটি আছে। কিন্তু মহানগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু বা সমমানের নেতারা না এলে কর্মীরা কেউ মাঠে থাকছে না। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের ঘরোয়া কিছু বৈঠক থাকলেও মাঠপর্যায়ে তাদের পদচারণা নেই। তবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেই তুলনায় মহিলা লীগের কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। খুলনা রয়েলের মোড়ে চা বিক্রেতা লোকমান উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের প্রথম দিকে অনেক মানুষ দেখা গেছে। কেমন একটা ঈদ ঈদ মনে হইছিল। তয় এখন মানুষ কমছে। দেখেন না পোস্টারও  নেই।’ এদিকে গত বৃহস্পতিবার দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রচারকাজ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রেখেছিলেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এর আগের রাতে দলের ১৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তার। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং নির্বাচন মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কখনো সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা আবার কখনো পুলিশ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদশন করছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে মধ্য রাতে হানা দিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের হুমকিও দিয়েছে। অনেককে অহেতুক আটকও করছে। তিনি আরও বলেন, নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করলেও, কেন্দ্রীয় নেতারা আসার পর ভয়কে জয় করার চেষ্টা করছি আমরা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও খুলনা সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয় এসএম কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনী আমেজ কমেছে বিষয়টা আসলে ওই রকম না। ঝড় বৃষ্টিতে পোস্টার পড়ে গেছে, সেখানে হয়তো নতুন করে লাগানো হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন নতুন পোস্টার লাগানো হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বৃহস্পতিবার মাদক মামলার কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার নির্বাচনী ইশতেহারে মাদকমুক্ত নগরী গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, একদিকে মাদকমুক্ত নগরী গড়তে চাইবেন, আর অন্যদিকে মাদক মামলার আসামিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রচারকাজ বন্ধ রাখবেন, এটাতো হতে পারে না। দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নিষ্ক্রিয় বলা যাবে না। সবাই কাজ করছে। ছাত্রলীগকে আমরা আলাদা ভাবে দায়িত্ব দিয়েছি। এছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্য সংগঠন গুলোকে ওয়ার্ড কমিটির সঙ্গেই সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কারণেই হয়তো তাদের চোখে পড়ে না। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে যুব সমাজ আমার পক্ষে কাজ করছে। দলের নেতা-কর্মীরাও আমার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এবারই প্রথম খুলনার মানুষ দলীয় প্রতীকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মেয়র নির্বাচিত করবে বলে প্রচারণার প্রথম দিকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

কিন্তু গত দুই দিনে গণসংযোগে গিয়ে ভোটারদের ভিতর এক ধরনের উদ্বেগ লক্ষ্য করেছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর