বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কার্ড দেখালেই ফ্রি চিকিৎসা রোহিঙ্গাদের

উন্মুক্ত হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল সেবাকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

কার্ড দেখালেই ফ্রি চিকিৎসা রোহিঙ্গাদের

বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও পথ্য দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সুপারিশ অনুসারে, ইস্যুকৃত বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্ড বা রেশন কার্ড দেখিয়ে সরকারি সেবা কেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে ফ্রি সেবা নিতে পারবে রোহিঙ্গারা। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সেবাপ্রার্থীদের পৃথকভাবে নিবন্ধন করবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সেবা কেন্দ্র ও হাসপাতাল। বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে হাসপাতাল নির্মাণ করে সেখানেই তাদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের বাইরে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পায় না তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা সরকারি হাসপাতালে বা সেবা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েও চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে। এ জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হবে না। সুপারিশে বলা হয়েছে, নিবন্ধনকৃত সেবাপ্রার্থীদের (রোহিঙ্গা) সরকারি সেবা কেন্দ্র/ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক/ কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে রোগী রেজিস্ট্রেশন ফি, ভর্তি ফি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত ফি (সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যেসব পরীক্ষা হয়) এবং রোগী পরিবহনের জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মওকুফ করা যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের বিনামূল্যে পথ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালের অনুকূলে পথ্য খাতে নির্দিষ্ট শয্যার অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দেরও সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। গত ১৭ এপ্রিল অর্থ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবার বিষয়ে এসব সুপারিশ জানিয়ে মতামত জানতে চায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। তবে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা ও পথ্য বাবদ কী পরিমাণ অর্থ লাগবে সে বিষয়ে চিঠিতে কোনো তথ্য উল্লেখ ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এ ধরনের সেবার সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে, সে কারণে এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী বাজেটে বড় আকারের বরাদ্দ থাকবে। দেশে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। শিবিরের বাইরে গিয়ে তারা কোনো চিকিৎসাসেবা নিতে পারে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), টার্কিশ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর রিহেবিলিটেশন (টিকা), রেডক্রসসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার সমন্বয়ে বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ, পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা চলছে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের মেডিকেল টিমও রোহিঙ্গা শিবিরে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই অসুস্থ। উদরাময় ও কলেরার ঝুঁকি রয়েছে বলে সেখানে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের বর্তমান চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্যাম্পের পাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে আশ্রিতরা। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সংস্থাও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। তবে এসব চিকিৎসাসেবা নিতে হয় ক্যাম্পে থেকেই। ক্যাম্পের বাইরে এসে কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার সুযোগ বর্তমানে পাচ্ছে না বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা।

সর্বশেষ খবর