বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

অর্থ অপচয় রোধের বাজেট প্রয়োজন

—ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

আলী রিয়াজ

অর্থ অপচয় রোধের বাজেট প্রয়োজন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেটের বিশাল আকার শুধু অর্থ অপচয় হয়। প্রতি বছর বাজেট পরিকল্পনার অনেকাংশ বাস্তবায়ন  হয় না।

এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, দুর্নীতি মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। যা জনগণের অর্থের অপচয় বৃদ্ধি করছে প্রতি বছর। এ জন্য শুধু আকার বিশাল করে বাজেট ঘোষণা না করে অপচয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক বৈষম্য কমাতে প্রান্তিক মানুষের কাছে বাজেটের সুবিধা দক্ষতার সঙ্গে পৌঁছাতে হবে। কেমন হবে আগামী বাজেট, বাজেটের সংকট, সম্ভাবনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশাল আকারের বাজেট নিয়ে আগ্রহ বেশি। এ জন্য বিশাল রাজস্ব আদায়ের টার্গেট থাকে। কিন্তু এই টার্গেট পূরণ করবে তো এদেশের মানুষ। মানুষের সেই সক্ষমতা কি আছে? পরোক্ষ কর দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এক তরফা কর আরোপ করা হয়। এতে দেখা যায় একই ব্যক্তিকেই বারবার কর দিতে হচ্ছে। প্রতি বছর যা বাড়ছে। এই টার্গেট অবাস্তব। কোনোভাবেই এটা কাম্য নয়। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাবে। এখন রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায় টার্গেটের বড় একটি অংশ আদায় করা সম্ভব হয়। ফলে বাজেটও কাটছাঁট করতে হয়। ফলাফল কী হলো? তিনি বলেন, কর আদায়ের জন্য কর্মকর্তারা কতখানি দক্ষ। তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অদক্ষতার কারণে অব্যবস্থাপনা দুর্নীতিও ছড়িয়ে পড়ে। কর ফাঁকির প্রবণতা বেড়ে যায়। যে খাতে কর আরোপের প্রয়োজন নেই বা অল্প পরিমাণে কর আরোপ করা উচিত। সেখানে দেখা যায় অনেক বেশি কর দিতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিবিধ কর দিতে হচ্ছে। এটা না করে যে সব খাতে কর আদায় ভালো হয় সেসব খাতে জোর দিতে হবে। সক্ষমতা বিবেচনায় কর আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। এটা শুধু আদায়ের ক্ষেত্রে নয়। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাজেটের অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে বৈষম্য কমানো। প্রান্তিক মানুষের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমাদের। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবছরের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কীভাবে করবে তার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে এই বাজেটে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আরও মানুষ যোগ করতে হবে। এখনো বহু মানুষ এসব সুবিধার বাইরে রয়েছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আগে। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার যেসব প্রকল্প নিয়েছে তা মনিটরিংয়ে মারাত্মক ঘাটতি আছে। বৃহৎ অনেক প্রকল্প হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মনিটরিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কম থাকলে স্বাভাবিকভাবে বাস্তবায়ন সঠিক হবে না। এখন যেসব সংস্থা ও সংগঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে আমলাতান্ত্রিকতায় সব আটক থাকবে। তিনি বলেন, একের পর এক অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে ব্যাংকিং খাতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এর মূল কারণ ব্যাংকগুলোর পুরো কাঠামোতে ফাটল ধরেছে। পরিচালনা পর্ষদ থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা, কর্মচারীদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন ঢুকেছে। বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের হয়েছে সিস্টেমেটিক ডিজিজ। এক জায়গায় নয় এটা সর্বগ্রাসী। পুরো সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বাজার এবং লোকাল লেভেলে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো। এখন ব্যাংকের যে অবস্থা, এগুলো সাধারণ মানুষের তেমন কোনো উপকারে আসছে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাজেটকেন্দ্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে কীভাবে সুশাসনের আওতায় আনা যায় তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে পেইডআপ কেপিটাল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনগণের টাকা এভাবে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। নতুন কয়েকটি ব্যাংকেও সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এটা অপচয়। এভাবে ব্যাংক বাঁচানো যাবে না। নিজেদের সুশাসন, দক্ষতা দিয়েই বাঁচতে হবে। ব্যাংকগুলোকে বৃহৎ প্রকল্পেই শুধু অর্থায়ন করবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বড় অঙ্কের টাকার জন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যাওয়া উচিত। পুঁজিবাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়াই সমীচীন হবে। এতে করে আমাদের পুঁজিবাজারও যথেষ্ট উন্নত এবং সুসংহত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর