বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাকা পাচার নিয়ে যত হৈচৈ হয় তত পাচার হয় না : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার নিয়ে যত হৈচৈ হয় তত টাকা আসলে পাচার হয় না।

এখানে হিসাবের একটা গোলমাল আছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। আইনেই আছে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বৈধ করা যাবে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে নতুন করে আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানি পেমেন্ট ওর্ডার (এমপিও) দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কিছু ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্যও বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক আগেই আইন আছে যে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যায়। অনেক সময় দেখা যায় কারও কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) রয়েছে। সেটা যদি সরকারের কোষাগারে আসে তাহলে ভালো। আগামী বাজেটে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে জাতীয়করণের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাজেটে কিছু স্কুল বাস নামানোর বিষয়ে ঘোষণা থাকবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষকের সংকট থাকলেও সার্বিকভাবে এ শিক্ষার অবস্থা ভালো। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। তবে উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষার অবস্থাও বেশ ভালো। এখন আমরা কোয়ালিটির দিকে নজর দিচ্ছি। আগামী বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬০ হজার কোটি টাকা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ইঙ্গিত দেন অর্থমন্ত্রী।

এ ছাড়া বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোরও কথা বলেন তিনি। ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়াতে যত টাকায় চিনি পাওয়া যায়, আমরা তার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি দিয়ে কিনি। এটা করতে হয় শুধু ১০ অথবা ১১টা চিনিকলের জন্য। চিনি এখন শুধু আখের ওপর নির্ভরশীল নয়। এখন চিনি তৈরির জন্য বিট খুবই সস্তায় পাওয়া যায়। তাই চিনি শিল্পকেই আমাদের দেশে রাখা উচিত নয়। এখনো যে চিনিকলগুলো রাখা হয়েছে তা একেবারেই খামাখা। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কাজ করে। তাই বাজারে যদি কেউ সুদ ১০ শতাংশ পায় তাহলে আমরা সঞ্চয়পত্রের সুদহার সাড়ে ১০ বা ১১ করে দিই। এখন পার্থক্যটা হয়ে গেছে সাত আর সাড়ে ১১ শতাংশ। এ সময় মন্ত্রীর পাশে বসে থাকা এনবিআর চেয়ারম্যান বর্তমানে ব্যাংক ঋণে সুদহার বেড়ে ১০ এর কাছাকাছি হয়েছে জানালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে তো সঞ্চয়পত্রের সুদ হার পুনর্নির্ধারণ করার প্রয়োজন হবে না’।  তিনি বলেন, বর্তমানে বৈষম্য বেড়েছে। তবে একটা বড় অংশ দারিদ্র্যের হাত থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন আমি যে কোনো মুহূর্তে অবসর নিতে প্রস্তুত আছি এবং সে অবসর নিতে পারব একান্ত তৃপ্তির সঙ্গে। কেননা আমাদের দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে নেমে যাবে, যা যে কোনো দেশেই থাকতে পারে। কেননা কিছু প্রতিবন্ধী বা অনগ্রসর জনগোষ্ঠী থাকতেই পারে। ফলে এটা বলাই যায় ২০২৫ সালের পর দেশে আর কোনো দরিদ্র মানুষ থাকবে না।  অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এবং ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ ইআরএফের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর