সোমবার, ২১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

অরক্ষিত সেন্ট্রাল আফ্রিকায় শান্তি বহুদূর

শিমুল মাহমুদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকা থেকে

সেন্ট্রাল আফ্রিকায় শান্তি কতদূর কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এখনো সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুই করা যায়নি। এই অঞ্চলে জাতিসংঘ গত ৩০ বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই। মধ্য আফ্রিকার এই দেশটিতে মুসলিম-খ্রিস্টান সংঘাত থামাতে ২০১৩ সাল থেকে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এক সময়ের ফ্রান্স কলোনি সেন্ট্রাল আফ্রিকায় প্রথমে আসে  ফ্রান্সের সৈন্যরা। পরের বছর ২০১৪ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয় দেশটিতে। এখানে বর্তমানে ২৩ দেশের ১১ হাজারের বেশি বিদেশি সৈন্য কাজ করছে। কিন্তু স্থানীয় অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়নি। এর ফলে দেশাটিতে কবে নাগাদ শান্তি ফিরে আসতে পারে তা নিশ্চিত করে বলার সময়ও এখনো আসেনি। সেন্ট্রাল আফ্রিকায় শান্তি কতদূর জানতে চাইলে এখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কান্ট্রি সিনিয়র কর্নেল খন্দকার আলী রেজা বলেন, আমি আমার আগের মিশন মোজাম্বিক ও সিয়েরা লিওনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, স্থানীয় লোকজন যেভাবে আমাদের সম্মান করত, বিশেষ করে ইউএন ফোর্সকে যেভাবে সম্মান করত এখানে সেটা নেই। এর কারণ হতে পারে শিক্ষা। ওখানকার লোকজন শিক্ষিত ছিল। এখানে সেটা নেই। ওখানে আমরা স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে অনেক মানবিক আচরণ পেতাম। কিন্তু এখানকার আর্মস গ্রুপগুলোর কাছে মানবিকতা বলে কিছু নেই। যদি কেউ নিরস্ত্র অবস্থায় তার সামনে যায়, তাহলে সবচেয়ে খারাপ যেটা হওয়ার সেটাই হবে। অস্ত্র ছাড়া তার সামনে গেলে সে তোমাকে রক্ষা করবে না। সে জন্য তাদের সামনে যেতে হয় সুরক্ষিত অবস্থায়। থাকতে হয় পুরো এগ্রেসিভ। না হলে মারা যাওয়ার আশঙ্কা আছেই। এখানে এই মানবিক গুণাবলির অবক্ষয় আছে। আমরা আমাদের দেশেও অনেক অপজিশন ফেস করেছি বিভিন্ন কারণে। সেখানে একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড আছে স্থানীয় জনগণের আচরণে। যেমন আমি এর চেয়ে নিচে নামতে পারব না। কিন্তু এখানে সেটার বালাই নেই। এসব কারণে শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনাটাই এখানে শুরু করা যায়নি। কর্নেল খন্দকার আলী রেজা বলেন, এখানে কাজ মূলত আমরা করি। আমাদের শান্তিরক্ষীরা করে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো। এই স্ট্যান্ডার্ড আমাদের ধরে রাখতে হবে, যাতে করে আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে না পড়ি। আমরা গত ৩০ বছরে অনেক উন্নতি করেছি। দেশের জন্য অনেক সুনাম এনে দিয়েছি। এখানে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় দেখুন, ১১ হাজারের মতো ট্রুপস আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীই এক হাজার আছে। ২৩টা দেশ অংশগ্রহণ করেছে, সেখানে আমাদের ১০ শতাংশ। এখানে যে মিলিটারি স্টাফ আছে, মিলিটারি অবজারভার আছে, তাদের মধ্যে আমাদের সংখ্যা ৮/৯ শতাংশ হবে। অনেক দেশ থেকেই শান্তিরক্ষীরা আসে। কিন্তু এখানে কাজ মূলত আমরাই করি। সঙ্গে আমাদের কিছু প্রতিবেশী দেশ আছে, তারা করে। মূলত শান্তিরক্ষার পারফরমেন্সটা আমাদের ওপরই নির্ভর করে। সেন্ট্রাল আফ্রিকায় তিন বছর ধরে দোভাষীর কাজ করছেন, রুভীন আল কামাল। তিনি বলেন, এ দেশের আম গাছ থেকে পড়ে পচে যাচ্ছে। এখানে যে পরিমাণ আম হয় তার পাঁচ শতাংশও তারা ব্যবহার করছে না। এখানকার আম প্রক্রিয়াজাত করে অনেক লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এখানে সুস্বাদু আনারস হয়, কলা হয়। এত স্বাদের পেঁপে হয়, আমি এখানে গত তিন বছরে যত পেঁপে খেয়েছি, সারা জীবনেও তত পেঁপে খাইনি। এখানকার আনারস এত মজা, মধুর মতো লাগে। যদি বাংলাদেশ থেকে সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি আনা যায় তাহলে কৃষি প্রজেক্ট করা অনেক লাভজনক হতে পারে। এ দেশের রিসোর্স ব্যবহার করে আমরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারি। তিনি বলেন, এখানে এত অস্থিতিশীল অবস্থা যে এখনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা যায়নি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক হওয়ার পরও আরও ৫/৭ বছর মিশন থাকে। এখানে পুরো বিষয়টিই অনিশ্চিত। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আইভরিকোস্ট, সিয়েরা লিয়ন, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, চাঁদে আমাদের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে দেশগুলোতে শান্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু সেন্ট্রাল আফ্রিকায় কবে শান্তি ফিরে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। এখনো শান্তির আলোচনাতেই নেই সেন্ট্রাল আফ্রিকার নাম।

সর্বশেষ খবর