বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা, সরানোর উদ্যোগ

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

টানা বৃষ্টিপাত ও বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে চলতি মাসেই আবাসন ঝুঁকিতে থাকা দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রাণঘাতী ভূমিধস ও বন্যার হুমকিতে থাকা কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শিবির থেকে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সমতল ভূমিতে নির্মিত বিশেষ শেডে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসন  নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রশাসন ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বর্ষা মৌসুমের পর আরও ১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হবে বলে জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। কক্সবাজারে বাংলাদেশ শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা ১ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জুনের আগেই সরিয়ে নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়েছি। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কিছু অংশে ১৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড়ি বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ। তার পরও প্রতিদিন চারটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকার বন উজাড় হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে ভূমিধসের শঙ্কা। তাই অধিক ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সব ধরনের কাজ শুরু হয়েছে।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনও অভিন্ন সুরে বলেন, ‘বসতি নির্মাণ ও জ্বালানি কাঠের জন্য শরণার্থীরা ইতিমধ্যে ৫ হাজার একর বন কেটে ফেলেছে। ফলে পাহাড়ের উপরিভাগ নরম হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভারি বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকির মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি।’ সরেজমিন উখিয়ার বালুখালী ও পালংখালী ক্যাম্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানকার পাহাড়চূড়া থেকে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারকে ইউএনএইচসিআর নির্মিত সমতলের নিরাপদ শেডে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে বালুখালী ও কুতুপালংয়ের পাহাড়ি বনভূমির টিলার চূড়া ও পাহাড়ের খাদে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ঝুঁকিতে বসবাস করছে। অতিবৃষ্টির কারণে যে কোনো সময় এখানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। বালুখালী ক্যাম্পের ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা মো. জমিরুল্লাহ (৫০) জানান, পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে বালুখালীর একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নিয়েছেন তারা। যখন তারা এখানে আসেন, এখানকার পাহাড়গুলোয় অনেকে দখল করে বসতি বানিয়ে ফেলেছিল। দেরিতে আসার কারণে ভালো কোনো জায়গা না পেয়ে তারা পাহাড়ের একেবারে ওপরে মাটি কেটে ঘর বানান। ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা ঠেঙ্গার চরে নৌবাহিনী প্রায় ১৫ হাজার একর ভূমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগে তা হবে না। বর্ষা শেষ হলেই সেখানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’

সর্বশেষ খবর