বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাড়ছে আমদানি

কেন কমছে না পিয়াজের দাম

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতীয় পিয়াজ আমদানির সুযোগ দিলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৬-৭ টাকা। আর স্থান ভেদে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ভারতীয় পিয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অতিরিক্ত মুনাফা  লোভী বিক্রেতাদের কারসাজি ও বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রমজানে পিয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।  এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯ মে পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৭ দিনে ৩০৬টি ট্রাকে ১০২ টি চালানের মাধ্যমে ভারত থেকে ১০ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। রমজান উপলক্ষে দিন দিন আমদানি আরও বাড়ছে। ভারত থেকে নাসিক, হাসখালি, বেলেডঙ্গা ও খড়কপুর জাতের পিয়াজ আমদানি হচ্ছে। দেশে নাসিক পিয়াজের চাহিদা বেশি। মূল্য বাড়ার কারণে সরকার আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে পিয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। রমজানের আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত খুচরা বাজারে বিক্রি হতো। নিত্য খাদ্যদ্রব্য পিয়াজের বাজার মূল্য ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পিয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে আর শুল্ককর সংযোজন হয়নি। তবে শুল্ককর উঠলেও অতিরিক্ত লাভে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকহারে পেয়াজের দাম বেড়েছে। এক ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলারে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ১৫ টাকা। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি পিয়াজের আমদানি খরচ পড়ছে প্রায় ১৮ টাকা। এলসিসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পিয়াজ পৌঁছাতে খরচ পড়ছে ১৯ টাকা কেজি। এসব পেঁয়াজ বন্দর থেকে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে তা ২৬ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার মতে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় আমদানি কম। এছাড়া গাড়ি ভাড়া বাড়ার কারণে দাম বেশি পড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, রোজায় খাদ্য তালিকায় পিয়াজের ব্যবহার বেড়ে যায়। প্রতিবছর এ সময় সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় পিয়াজের দাম বাড়ে। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় পিয়াজ।  বেনাপোল বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, তারা প্রতিকেজি ভারতীয় পিয়াজ আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনছেন ২৩ টাকায়। আর তা খুচরা বিক্রি করছেন ২৫ টাকা কেজি। গরমে অনেক পিয়াজ পচে যায়। এতে একটু বেশি দাম ধরতে হয়। আর কেনার ওপর নির্ভর করে বিক্রি দর বাড়ে-কমে। বাজারে অনেককে আবার ২৭ টাকায়ও পিয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। ক্রেতা আবদুস সামাদ জানান, প্রতিবছর রোজার আগে পিয়াজের বাজার দর বেড়ে যায়। অতিরিক্ত পয়সা কেবল সাধারণ ক্রেতাদের গুনতে হয়। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রোজার মধ্যে পিয়াজের বাজার আরও ঊর্ধ্বগতি হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধায় যারা পিয়াজ আমদানি করছেন তাদের তালিকা ও আমদানি পণ্যের হিসাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে রয়েছে। তারা কি মূল্যে কিনছেন আর কি মূল্যে পিয়াজ বিক্রি করছেন তা তদারকি করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার সাইদ আহমেদ রুবেল জানান, পিয়াজের ওপর শুল্ককর না থাকায় রোজায় আমদানি বেড়েছে। বাজারের ভোক্তাদের চাহিদার কথা ভেবে আমদানি করা পিয়াজের চালানগুলো অতি সহজে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যাতে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর