বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

বিনিয়োগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তানীতি চাই

— আনোয়ার উল আলম চৌধুরী

রুহুল আমিন রাসেল

বিনিয়োগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তানীতি চাই

আগামী বাজেটে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিনিয়োগের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নীতিমালা থাকা উচিত বলে মনে করেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। বিনিয়োগের জন্য সরকারের চারটি পদক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, মানুষ তার বিনিয়োগের নিরাপত্তা চায়। এ মুহূর্তে বিনিয়োগ আনতে হলে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামোগত সুবিধার নিশ্চয়তা দিতে হবে। যেসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, তার একটা সমাধানে আসতে হবে। সঠিকভাবে দক্ষ শ্রমিক ও মধ্যম সারির জনবল প্রশিক্ষিত করতে হবে। এর সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটে প্রণোদনার চেয়ে এই বিষয়গুলো জরুরি।

আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে নিজের তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি হলে বিনিয়োগ সক্রিয়ভাবেই আসবে। মানুষ তার বিনিয়োগের নিরাপত্তা চায়। বিনিয়োগের জন্য দক্ষ লোকবল চায়। প্রশাসনের সহায়তা চায়। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের বিনিয়োগের নিরাপত্তা যার যার নিজের নিতে হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিনিয়োগের কোনো নিরাপত্তা নেই। এটা বাজেটে থাকা উচিত। ইভিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের প্রতিশ্রুতি আর চেষ্টার কমতি আমি দেখছি না। আশা করছি এবারের বাজেটেও সরকার সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এর পরও কেউ বলবে, এটা নির্বাচনী বাজেট। তবে এটা তো ঠিক, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছে। আমরা বিদ্যুতে অনেক উন্নতি করেছি। আজকে মানুষ বিশ্বাস করে, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট হবে। আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে দেখছি। আট লেনের কথা চলছে। ঢাকায় মেট্রোরেল হচ্ছে। তবে সবকিছুর পরও মানুষ কিন্তু স্বস্তিতে নেই। এর কারণ হলো, মানুষ যানজটে ভুগছে। অবকঠামোর গতি সঠিক পথে নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না।’ ব্যাংকিং খাতের প্রসঙ্গ টেনে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তিনটি বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। একটি হলো, ব্যাংকিং খাতে আসলেই কি নজর দেওয়া হচ্ছে? এ খাতে যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি দরকার ছিল, সেভাবে কাজ করছে না। অথচ ব্যাংকিং খাত শিল্পের হৃদয়। ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে গেলে বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তিতে বিরাট আঘাত আসবে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। বাজেটে ব্যাংকিং খাতকে এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’ তার মতে, পাঁচ ঘণ্টার সড়কপথ যেতে লাগছে ১৫ ঘণ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ের অভাবে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন দ্রুতগতিতে এগোতে পারছে না। বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন ঠিকভাবে হচ্ছে না। যদিও এবারের বাজেটে তৃতীয় বড় বরাদ্দের খাত হতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল হওয়াটা যত না কঠিন, এর চেয়েও বেশি কঠিন এ মর্যাদা ধরে রাখা। তার মানে, আমাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দরকার। বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু অনেক বড় হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি টেকসই করতে প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো কিন্তু মানসম্মত হয়নি। শিক্ষাকে চাকরি বা কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। দেশের ৪০ শতাংশ শিক্ষিত মানুষ বেকার, এটা আমাদের জন্য মানায় না। কারণ বাংলাদেশের বড় সম্পদ মানুষ।’ পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যাওয়ার মতো মানসিকতা গত ১০ বছরে গড়ে উঠেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র ২৫টি পরিবার ছিল মিলিয়নিয়ার। আমাদের কিন্তু ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা ছিল না। দেশে সবে তৃতীয় প্রজন্ম ব্যবসায় প্রবেশ করছে। এখন মানুষ ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কথা চিন্তা করে। আগে এটা করত না। এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হচ্ছে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে অনেক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। এখন পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করছেন, তারাও কিন্তু অনেক সময় ভুল পথে এগোচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর