শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইন আদালত

৯ বছরে বিনা খরচে আইনি সেবা পেয়েছেন ৩ লাখ মানুষ

আরাফাত মুন্না

৯ বছরে বিনা খরচে আইনি সেবা পেয়েছেন ৩ লাখ মানুষ

মনসুরুজ্জামান খান থাকেন রাজধানীর সূত্রাপুরে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। ১৯৫৬ সালে পিতার দায়ের করা জমিজমা সংক্রান্ত মামলার দায়িত্ব তিনি পান উত্তরাধিকার সূত্রে। অনেক কষ্ট করে সেই মামলা চালাচ্ছিলেন। নিম্ন আদালত ও হাই কোর্টে তার পক্ষে রায় আসার পর প্রতিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় আপিল বিভাগে মামলা চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির দ্বারস্থ হন তিনি। কমিটি তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর আপিল বিভাগও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। অবশেষে ওই পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় মনসুরুজ্জামানের। শুধু মনসুরুজ্জামানই নন, ২০০৯ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পেয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৩১২ জন মানুষ। এমন দরিদ্র ও অসচ্ছল বিচার প্রার্থীদের বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। উচ্চ আদালতে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি এবং জেলাগুলোতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সেবা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া চৌকি আদালতেও বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিতে কাজ করছে লিগ্যাল এইড কমিটি।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংস্থাটির উদ্যোগে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে ২০১৭ সালে সরকারি খরচে অসচ্ছল বিচার প্রার্থীদের ১৫ হাজার ৮৯৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৬ সালে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২২০টি। এ ছাড়া গত বছর কারাগারে আটক থাকা ১২ হাজার ৮৯৬ জনকে আইনগত সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৮১ হাজার ৩১২ জনকে সরকারিভাবে আইনি সেবা দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৬৪টি জেলা কমিটির মাধ্যমে আইন সহায়তা পেয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ জন। তাদের মধ্যে ৯৯ হাজার ৯৭ জন নারী আইনি সহায়তা নিয়েছেন। বাকি ৯২ হাজার ৯৪৩ জন পুরুষ এবং ৪৯২ জন শিশু এ সহায়তা নেয়। এ ছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আইনি পরামর্শ নিয়েছেন ২৭ হাজার ৯৮৬ জন। এ ছাড়া সংস্থার হটলাইনের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৩২৮ জন সহায়তা নিয়েছেন। টোল ফ্রি হটলাইনের (১৬৪৩০) মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন ২২ হাজার ১২১ জন।

জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার উপ-পরিচালক যুগ্ম জেলা জজ আবেদা সুলতানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ছাড়াও বর্তমানে সংস্থার টোল ফ্রি হটলাইনের মাধ্যমেও আমরা আইনি সেবা দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, আমাদের টোল ফ্রি নম্বরে যে কেউ ফোন করে যে কোনো ধরনের আইনি পরামর্শ চাইতে পারবেন। আমাদের কর্মীরা পারলে সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদি সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তীতে তাকে ফোন করে তার সমস্যা সংক্রান্ত পরামর্শ জানিয়ে দেন। জানা গেছে, ধনী-গরিব নির্বিশেষে আইনি আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে সরকার। তবে আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৯ সালে। প্রথম দিকে শুধু বিনা খরচে মামলা পরিচালনার মাধ্যমে আইনি সহায়তা দেওয়া হতো। বর্তমানে এ সহায়তার পরিধি বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর