শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

সবুজ পোশাকশিল্প গড়তে রাজস্ব সুবিধা প্রয়োজন

—এ কে এম সেলিম ওসমান

রুহুল আমিন রাসেল

সবুজ পোশাকশিল্প গড়তে রাজস্ব সুবিধা প্রয়োজন

তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে আধুনিক ও সবুজ শিল্প হিসেবে গড়তে আগামী বাজেটে রাজস্ব সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান। তার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট ব্যবস্থাপনা আরও সহজীকরণ করা উচিত। স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরের হয়রানি বন্ধ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অডিট কার্যক্রম বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হলে হয়রানি কমবে বলে তিনি মনে করেন। এবারের বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ কে এম সেলিম ওসমান উইজডম এ্যাটায়াস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য।

সেলিম ওসমান বলেন, পোশাকশিল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ সবুজ শিল্প বা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার যন্ত্রপাতি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করমুক্ত সুবিধায় আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সবুজ শিল্পায়নের পরামর্শদাতার অগ্রিম আয়কর— এআইটি ও ভ্যাট মওকুফ করা প্রয়োজন। এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোশাকশিল্পে কমপ্লায়ান্সের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি ও গ্রিন প্রোডাকশনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে গ্রিন প্রোডাকশন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যাপ্ত হারে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। তাই আগামী দিনগুলোতে পোশাকশিল্পের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এখনই সবুজ শিল্প গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংক ও অডিট ব্যবস্থাপনার ত্রুটি তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, রপ্তানিখাতের নগদ সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট সিস্টেমকে আরও সহজীকরণ করা প্রয়োজন। রপ্তানি করা পণ্যের বস্ত্রমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের পরিবর্তে সরাসরি প্রত্যাবাসিত মূল্যের ওপরে তা নির্ধারণ করা হোক। এর সঙ্গে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরের হয়রানি বন্ধ করা দরকার। তার মতে, নিট পোশাকশিল্পের সুরক্ষায় এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত অডিট প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অডিট ফার্ম সার্কুলারগুলোর অপব্যখ্যা দেয়। ফলে পোশাকশিল্প মালিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারাও সার্কুলারগুলোর অপব্যখ্যা দিয়ে মালিকদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই অডিট কার্যক্রমকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হলে হয়রানির প্রবণতা কমে আসবে।

বিকেএমইএ সভাপতি রপ্তানি মূল্যের ওপর উেস আয়কর কর্তন না করার প্রস্তাবে বলেন, আগামী ৫ বছরের জন্য শুধু শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ চূড়ান্ত উেস আয়কর নির্ধারণ করা হোক। বর্তমানে মূল রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে প্রত্যাবাসিত বৈদেশিক মুদ্রার ওপর শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে উেস আয়কর প্রদান করতে হয়। আবার ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় করতে হলেও একইভাবে উেস আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল ক্রয় করছে, তাদের একই তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য একাধিকবার বিভিন্ন পর্যায়ে উেস কর প্রদান করতে হচ্ছে। তার মতে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিট শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামাল, শ্রম ও আনুষঙ্গিক উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উত্পাদন খরচ অনেক বেড়েছে।

সেলিম ওসমান রপ্তানি কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের বন্ডেড হাউসকে তদারকির জন্য ‘শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট’কে যে অতিরিক্ত দায়িত্ব  দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করা প্রয়োজন। কারণ পোশাকশিল্পের তদারকির জন্য বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক ২টি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট আছে। বন্ড কমিশনাররা বন্ডেড ওয়্যার হাউসের কার্যক্রম তদারকি করেন। তারপরও বর্তমানে একই কাজ দুইবার করার ফলে একদিকে যেমন অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হচ্ছে, অন্যদিকে রপ্তানিকারকরা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যার সমাধান এবারের বাজেটে চাই। তিনি আরও বলেন, রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে ও তৈরি পোশাকশিল্প খাতের আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখতে অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক, ভ্যাট (মূসক) ও অগ্রিম আয়করমুক্ত সুবিধা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর