শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঋণসুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটেই থাকা উচিত

—কাজী মশিহুর রহমান

আলী রিয়াজ

ঋণসুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটেই থাকা উচিত

কাজী মশিহুর রহমান

দেশের ব্যাংকিং খাত দেশের উন্নয়ন কাঠামোয় শীর্ষ ভূমিকা পালন করছে। শিল্প-বিনিয়োগে প্রধান ভূমিকাও রাখছে ব্যাংক। উৎপাদন প্রক্রিয়া যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে হলে ব্যাংকগুলোকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের কস্ট অব ফান্ড ২ থেকে ৩ শতাংশ। কিন্তু বিনিয়োগ বা ঋণ সুদ হার যদি ১২-১৩ শতাংশ হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সব ঋণ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটেই থাকা উচিত। মার্কেন্টাইল ব্যাংক গ্রাহক ও আমানতকারীদের কথা চিন্তা করেই ব্যবসা করছে। ব্যাংকারদের উচিত যাচাই-বাছাই করে ঋণ বিতরণ করা। অন্যথায় একটি ব্যাংকের খারাপ পরিস্থিতি পুরো খাতকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।

দেশের ব্যাংকিং খাত, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সফলতা নিয়ে এসব কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মসিহুর রহমান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন এই ব্যাংকার। দীর্ঘ ব্যাংকিং পেশায় এর আগেও দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কাজ করেছেন একাধিক বিদেশি ব্যাংকে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯ বছর কাটিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের এ ব্যাংক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সফলতা দেখিয়ে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের তালিকায় উঠে এসেছে। খেলাপি ঋণ কমানো, স্বচ্ছতা, বিনিয়োগমান, আইটি, প্রশাসনিক দক্ষতাসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাংকটির সফলতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন মসিহুর রহমান।

মসিহুর রহমান বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৪০ বছরের পথ ২০ বছরেই অতিক্রম করতে পেরেছে। শক্তিশালী সমৃদ্ধ ব্যাংক হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই দেশের ব্যাংকিং খাতের এক-দুটি ব্যাংকের নাম নিলে মার্কেন্টাইলের নাম চলে আসবে। আমরা মুডিসের রেটিংয়ে ‘বি-১’ অর্জন করেছি। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ‘ন্যাশনাল প্রডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ অর্জন করেছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। তিনি বলেন, এসব সফলতার মূল কারণ আমাদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা, পর্ষদের সর্বাত্মক সহযোগিতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক শুধু মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসা করে না। আমরা আমাদের শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহক, আমানতকারীদের কথা চিন্তা করি। আমরা এ বছর সব ব্যাংকের চেয়ে বেশি ডিভিডেন্ট দিয়েছি। গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ না দিয়ে ঋণ সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে রেখেছি। আমানতকারীদের জন্য সুদহার অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমাদের বেশি। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ১২৯টি শাখা ও ১৬২টি এটিএম বুথের মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য আমরা বিশ্বের ৬২২টি ব্যাংকের সঙ্গে করেসপনডেন্ট ব্যাংকিং রিলেশনশিপ তৈরি করেছি। দেশি-বিদেশি ৩৩টি এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত অর্থ দ্রুত ও নিরাপদে আমরা স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এ ছাড়া আই-ব্যাংকিংসহ আধুনিক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদানে মার্কেন্টাইল ব্যাংক একযোগে কাজ করছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে আমাদের ব্যাংকের ব্যালান্সশিট আকার ২৬ হাজার ২৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে জমা আছে গ্রাহকদের ২১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকার আমানত। এ সময় পর্যন্ত আমরা ২০ হাজার ৩০১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছি। ২ হাজার ১৭২ জন ব্যাংকার নিয়ে আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ এটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য আমরা দক্ষ জনবল নিয়োগ দেব। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুটি এক্সচেঞ্জ হাউস আছে। নতুন করে আমরা একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটির মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক এরই মধ্যে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। এসব উদ্যোক্তাকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ বছরের মধ্যেই নতুন উদ্যোগগুলো কার্যকর করা হবে। চলতি বছর আমরা নতুন ১০টি শাখা খোলার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যাংকের এটিএম বুথের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে আমরা ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি সমৃদ্ধ কল সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। গণমানুষের ব্যাংক হওয়ার পথে এগুলো হবে আরেক ধাপ অগ্রগতি। মসিহুর রহমান বলেন, গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এজন্য আইটি খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এতদিন আমরা ভার্সন-১০-এ ছিলাম। এখন ভার্সন-১৭-তে যাওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

আগামী বছরের মধ্যেই মার্কেন্টাইল ব্যাংক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাংকে উন্নীত হবে। আগে থেকেই আমরা সেন্ট্রালাইজড মডেলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের গ্রাহকসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মুনাফা প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বছর ২২৫ কোটি টাকা প্রভিশন রাখা সত্ত্বেও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩০১ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।

তিনি আরও বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্লোগান হলো বাংলার ব্যাংক। এটি শুধু স্লোগানের মধ্যেই সীমিত নেই। সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে সহজেই ভিড়তে পারে। গ্রাহকবান্ধব হওয়ায় জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। কৃষি, এসএমই, রিটেইল, পোশাক খাত কিংবা বৃহৎ শিল্প সব খাতেই আমাদের ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে।

সর্বশেষ খবর