সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কী চমক থাকছে বাজেটে

নির্বাচনের বছরে স্বস্তি দিতে চান অর্থমন্ত্রী, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার কথা থাকবে বাজেট বক্তৃতায়

মানিক মুনতাসির

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্বস্তির এক বাজেট দিতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে বাজেট বক্তৃতায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য করপোরেট কর কমানো, পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী সবার জন্য একটি সার্বজনীন বীমা স্কিম চালুর রূপরেখা তুলে ধরবেন এই বাজেট বক্তৃতায়। এদিকে গত বছর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়াতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। এ বছর তা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমার প্রতিটি স্তর বা ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এটি হবে তার ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়া ১২তম বাজেট। তার এই রেকর্ড গড়া বাজেটকে স্মরণীয় করে রাখতে চান আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের শেষদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগও প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আগামী বাজেটকে গতানুগতিক বাজেটের চেয়ে একটু আলাদাভাবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি। তাই এই বাজেটে সর্বস্তরের জনগণকে কীভাবে স্বস্তি দেওয়া যায় সে চেষ্টাই থাকবে বেশি। কেননা জনগণকে তুষ্ট রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে আবারও টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে নতুন রেকর্ড গড়তে চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। যার প্রভাব আসন্ন বাজেটে দেখা যাবে বলে মনে করেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, এবারের বাজেটটা একটু নির্বাচনমুখীই হবে। তবে করপোরেট কর কমানো, ব্যাংকিং কমিশন গঠনসহ বেশ কিছু ভালো উদ্যোগও থাকবে। তবে এতসব সুখবর দিতে গিয়ে বেগও পেতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। কেননা এবারও বাজেটে থাকবে বিশাল আকারের ঘাটতি। এ ছাড়া এবারের বাজেটে নতুন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত চ্যালেঞ্জ খাত যুক্ত হয়েছে ‘রোহিঙ্গা’ বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত থেকে জনগণকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে চায় সরকার। এজন্য সব ধরনের খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাপক হারে বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা। সেই সঙ্গে এ ধরনের উপকারভোগীর ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হবে। বছরজুড়েই থাকবে নানা ধরনের টেস্ট রিলিফ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)। এজন্য স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যরা (এমপি) বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে ইতিমধ্যে তাদের চাহিদাপত্রও জমা দিয়েছেন। জনগণকে সহজেই আকৃষ্ট করা যায় এবং দৃশ্যমান এ ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। জানা গেছে, ব্যাংক ব্যবসায় আস্থা ফেরাতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেট বক্তৃতায় একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা দেবেন অর্থমন্ত্রী। কৃষকদের সুবিধা দিতে অন্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। সেই সঙ্গে কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি সরঞ্জাম বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। বাড়ানো হচ্ছে ব্যক্তিগত আয়কর সীমা। বেশি সংখ্যক মানুষকে সুবিধা দিতে বিস্তৃত করা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। সেই সঙ্গে ভাতাও বাড়বে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য সুবিধাভোগীর।

সবশ্রেণির মানুষকে শেষ বয়সে স্বস্তি দিতে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার রূপরেখা দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এ ঘোষণা অবশ্য গত বছরের জুনেও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এ বছরের বাজেটে তার পুরো প্রতিফলন দেখা যাবে। এজন্য অর্থবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। শুধু সরকারি চাকুরেরা চাকরি জীবন শেষে পেনশন পাবেন আর বেসরকারি চাকুরেরা কিছুই পাবেন না এটা একটা বড় ধরনের বৈষম্য বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। কেননা মেধাবীদের অনেকেই বেসরকারি খাতে কর্মরত। এ ছাড়া সিনিয়র সিটিজেনদের অবসরকালীন সময়ের জন্য রাষ্ট্রের কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে। ফলে সরকার একটি তহবিল গঠন করে সেখানে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে। তারাও প্রতি মাসে সেখানে কিছু অর্থ জমা দেবেন। পরবর্তীতে চাকরি জীবন শেষে যেন প্রত্যেকেই আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হন সেটা নিশ্চিত করবে সরকারই। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রূপরেখা বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ইউনিভার্সল পেনশন সিস্টেমের জন্য একটি ইনস্টিটিউশন তৈরি করতে হবে। ফরমাল ও ইনফরমাল পেনশনের জন্য রেগুলেটরি অথরিটি লাগবে। অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে এটার রূপরেখা দেবেন। তার ভিত্তিতে কাজ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অর্থবিভাগের সূত্রগুলো বলছে, নতুন বাজেটের মোট খরচ ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বার বার বলেছেন এটা হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। আর এবারের বাজেটের মোট আয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক আদায়ের লক্ষ্য থাকবে ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের টার্গেট থেকে ৩২ ভাগ বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে আসছে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। যা অভ্যন্তরীণ উৎস যেমন ব্যাংক খাত, সঞ্চয়পত্র এবং বৈদেশিক উৎস থেকে মেটানো হবে। সূত্র জানায়, কৃষি ও কৃষকের সুবিধার্থে এ খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ভর্তুকির লাগাম টেনে ধরা হবে। এজন্য বরাদ্দ বাড়ালেও বছর শেষে এ খাতে খরচ কমই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৮ বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে কমপক্ষে ৬ হাজার কোটি টাকা অব্যবহূত রয়ে যাবে। যা সংশোধিত বাজেটে কমানো হয়েছে। সে হিসাবে ভর্তুকিতে এ বছর খরচ হবে ২২ হাজার কোটি টাকা। আর আগামী বাজেটে ভর্তুকি খাতে ৩১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করছে অর্থবিভাগ। প্রকৃতপক্ষে অর্থবছর শেষে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে না এমন পরিকল্পনাই নেওয়া হচ্ছে বলে অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর