সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধর্ষণে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক, ১৮ দফা নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের ঘটনায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে আলামত সংগ্রহের পর পরীক্ষা শেষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট

সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণসংক্রান্ত এক রিট মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ধর্ষণ মামলা ও তদন্তের বিষয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট। বাড্ডার গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টসহ পাঁচটি সংগঠনের ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দেয়। গত এপ্রিলে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করা হলেও সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়নি। গতকাল রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী শারমিন আক্তার এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

আইনজীবী জানান, ধর্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে কোনো থানায় মামলা করা যাবে বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে মামলা দায়েরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাতে হবে। এ ছাড়াও ধর্ষণের শিকার নারীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ডিএনএ টেস্ট এবং কাউন্সেলিং সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতি মেট্রোপলিটান এলাকায় একটি করে অফিস স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না হওয়া পর্যন্ত এই নীতিমালা অনুসরণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। আদালতের রায়ের সুপারিশ, পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার আলোকে নীতিমালা তৈরি করতে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শককে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— ধর্ষণের অভিযোগ এবং অন্যান্য যৌন নিপীড়নের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিখে ফেলবেন। এ ধরনের তথ্য পাওয়ার পরপরই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে জানাতে হবে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার জন্য একটি আলাদা ওয়েবসাইট খুলতে হবে। যাতে অভিযোগকারী অনলাইনে তার অভিযোগ নিবন্ধন করতে সক্ষম হন। ধর্ষণের শিকার নারীদের সহায়তার জন্য সমাজকর্মীদের একটি তালিকা করতে হবে। ধর্ষণের শিকার প্রত্যেকের পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ৪০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত আরও বলেছে, ‘সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো পুলিশ অফিসার যদি অভিযোগ গ্রহণে বিলম্ব করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকতে হবে। প্রত্যেক থানায় কনস্টেবলের নিচে নয় এমন একজন নারী পুলিশ রাখতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর ডিউটি অফিসার একজন নারী কর্মকর্তার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাধ্যমে ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী, সমাজকর্মী বা আইনজীবীর উপস্থিতিতে অভিযোগ রেকর্ড করবেন।’ নির্দেশে আরও বলা হয়, লিখিত তথ্য গ্রহণের পর কোনো প্রকার বিলম্ব না করে তদন্ত কর্মকর্তা ভুক্তভোগীকে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করবেন। ভুক্তভোগীর দ্রুত সেরে উঠতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকতে হবে। আদালত আরও বলেছে, নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও ওয়েব সংবাদমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই নীতিমালা মেনে চলতে হবে। ২০১৫ সালের ২১ মে রাতে গণধর্ষণের শিকার হন এক গারো তরুণী। ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। এ ঘটনায় পৃথক পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন বাদী হয়ে জনস্বার্থে হাই কোর্টে রিট করে। এই রিটের পর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় আদালত।

সর্বশেষ খবর