শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

এমবিবিএস এক পেশাদার খুনি!

মিলেছে অস্ত্রভাণ্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। মানুষের জীবন রক্ষা করাই তার কাজ। কিন্তু এই চিকিৎসক জীবন রক্ষা বাদ দিয়ে জীবন হরণ করেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার পরিচয় ভয়ঙ্কর খুনি। অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে তার। তিনি ভাড়ায় খুন করেন। অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেন অপরাধীদের কাছে। এ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত তার স্ত্রীও।

ভয়ঙ্কর এই চিকিৎসকের নাম জাহিদুল আলম কাদির। যিনি ডা. জাহিদ নামে পরিচিত। তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার। পুলিশ এই দম্পতিকে গ্রেফতারের পর অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দারা রীতিমতো হতবাক।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম দীর্ঘদিন নজরদারির পর তাদের গ্রেফতার করে। স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি সূত্র জানায়, ডা. মো. জাহিদুল আলম কাদির পেশায় একজন ডাক্তার। কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই এ পেশার আড়ালে তিনি একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী ও পেশাদার কিলার। তিনি শুধু অস্ত্র ব্যবসায়ী নন, বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষ পারদর্শীও। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬২২ রাউন্ড গুলি। এর মধ্যে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল ৩টি, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল ১টি, পয়েন্ট ৩২ বোর রিভলবার ৪টি, পয়েন্ট ২২ রিভলবার ১টি, ৭ পয়েন্ট ৬৫ পিস্তল ৫টি ও পয়েন্ট ২৫ পিস্তল ১টি। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার। তিনি বলেন, ১৫ মে ডা. মো. জাহিদুল আলমকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ২টি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে রুজু মামলায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে ৩ জুন গাবতলী থেকে তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। মাসুমা আক্তার জেরার মুখে স্বীকার করেন, তার স্বামী ডা. জাহিদুল আলমের কাছে আরও অবৈধ বিদেশি অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। ডা. জাহিদকে ফের রিমান্ডে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গতকাল ভোরে ময়মনসিংহের বাঘমারা এলাকায় তার ফ্ল্যাট থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র ও গুলি তার নিজ বাসায় বিশেষভাবে তৈরি করা একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে লুকানো ছিল। তিনি জানান, ডা. জাহিদুল আলম কাদির ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি বা স্থায়ী কোনো চাকরি করতেন না। গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করতেন। তিনি চিকিৎসা পেশার অন্তরালে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতেন। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষ পারদর্শী ডা. জাহিদ। এ ছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অস্ত্রের আকার-আকৃতি পরিবর্তন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি অনেক দক্ষ। পেশাদার কিলার হিসেবে তিনি বেশ কয়েক জায়গায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগেই তাকে গত মাসে গ্রেফতার করা হয়। ডা. জাহিদুল আলমের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী ও পেশাদার খুনির সখ্য ছিল। তিনি আরও জানান, ডা. জাহিদ বেশকিছু অস্ত্র বৈধ বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেসব বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা তার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের অভিযান : র‌্যাব-২-এর অপস অফিসার সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল বিকালে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তুল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন ও ৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লোকজনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছিলেন।

সর্বশেষ খবর