শিরোনাম
রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকা-২ আসন

খাদ্যমন্ত্রীর পক্ষে বেপরোয়া ওসি শাহিন ফকির

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকিরের উসকানিতে খাদ্যমন্ত্রীর সমর্থকরা কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের ইফতার মাহফিলের অতিথিদের ওপর হামলা করেছে।

এতে ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ ৭ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ওসি মাদ্রাসায় গিয়েও হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বলে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, শাহীন আহমেদ ঢাকা-২ আসন থেকে নৌকার টিকিটে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ইফতার অনুষ্ঠানে আসা সমর্থকদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ, তাদের ভয় দেখাতে ওসি বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালিয়েছেন এবং মাদক মামলার হুমকি দিয়েছেন। ওসি শাসিয়ে দিয়ে বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছাড়া কামরাঙ্গীরচরে আওয়ামী লীগের আর কারও পোস্টার থাকবে না। নেতা-কর্মীরা জানান, গত শুক্রবার কামরাঙ্গীরচরের মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আশরাফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, থানার পক্ষ থেকে কয়েক দফা এসে ইফতার পার্টি বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তারা জানতে চান, কেন শাহীন আহমেদকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলো। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন যশোরীও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি নিজে উপস্থিত হয়ে শাহীন আহমেদকে অতিথি করার কারণ জানতে চেয়েছিলেন বলে তিনি জানান। জানা যায়, সব বাধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান ধরে রাখতে চাইলে উত্তেজনা বাড়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ইফতার পার্টির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে তাদের সহিংসতার সঙ্গে পথরোধ করে কামরুল সমর্থকরা। একপর্যায়ে তাদের হামলায় কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে সালমান (৩৬), নাঈম (২৩) ও রায়হানকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সালমানের মাথায় জোরে আঘাত করা হলে তিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাহীন আহমেদকে ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা কামাল সরকার, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বিপ্লব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিমুলের নেতৃত্বে অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সমর্থকদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে হামলায় প্রত্যক্ষভাবে মদদ দেন ওসি শাহিন ফকির। কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান রতন জানান, মাদ্রাসা এলাকায় হামলার পর খাদ্যমন্ত্রীর অনুসারী ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরেও তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় পুলিশও তল্লাশির নামে হয়রানি করে। রতন বলেন, ‘ঘটনা কামরাঙ্গীরচরের মাদ্রাসাকে ঘিরে হলেও পুলিশ আমার পুরান ঢাকার বনগ্রামের বাসায় গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। সঙ্গে ছিল কামরুল ইসলামের কয়েকজন সমর্থকও’। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘শাহীন আহমেদের সমর্থক বলে থানায় ডেকে নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন থানার ওসি শাহিন ফকির। ওসি বলছেন, শাহীনের পক্ষ না ছাড়লে আমার বাড়ির ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাবে। মাদক মামলায় গ্রেফতার করে ক্রসফায়ারে দেবে।’ ওসি একইভাবে থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মাসুদ মিন্টু ও মোরসালীন হোসেনকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, তাদের অভিভাবকদেরও থানায় ডেকে নিয়ে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, ওসি ছাত্রনেতা ও তাদের অভিভাবকদের বলেছেন, ‘খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছাড়া কামরাঙ্গীরচরে কোনো নেতার পোস্টার থাকবে না, তার বাইরে কোনো রাজনীতি থাকবে না। কামরুল ইসলামই নৌকার নমিনেশন পাইবো, আমার কথার বাইরে যারা কাজ করবে তাদের খবর আছে। আমি সাবধান কইরা দিতেছি।’ জানা যায়, গত ২৭ মে থানায় ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয় এবং ৬ জুন ছাত্রলীগ নেতা রতন, মিন্টু ও মোরসালীনের বাড়িতে মাদক উদ্ধারের নামে তল্লাশি চালানো হয়। সাইদুর রহমান রতন বলেন, বহুবার শাহীন আহমেদের সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে কামরুল ইসলামের সমর্থকরা। কোনো ঘটনায়ই পুলিশ মামলা বা অভিযোগ গ্রহণ করেনি। ফলে এখন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে তারা থানায় অভিযোগ দেন না। ছাত্রনেতাদের অভিভাবকরা বলেন, এ পরিস্থিতিতে তারা সন্তানদের নিরাপত্তাহানির আশঙ্কা করছেন। হামলার ঘটনার সূত্র ধরে ওসি শাহিন ফকিরের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনা আজ (শনিবার) জানতে চান কেন? সাংবাদিকরা ঢিলা হয়ে গেছেন! এখানে ইফতার পার্টিতে হামলা বা এমন কিছু ঘটেনি।’ হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছেন, এ অভিযোগ জানালে ওসি বলেন, ‘কোথায় ঘটনা, কারা বলছে? তারা কোন পক্ষ?’ ওসির ওই প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদক জানান, ‘মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় আয়োজিত ইফতার মাহফিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী অংশ নিচ্ছিল, তারা শাহীন আহমেদের সমর্থক। ওসি শাহিন ফকির বলেন, শাহীন আহমেদ কে?’ মোবাইল ফোনে কথা বলার সময়, ওসি তার পাশের কাউকে বলেন, ‘এই শালাকে গাড়িতে তোল। এখানে মার্ডার হয়ে গেছে যেহেতু...।’ প্রতিবেদক ওই সময় ওসিকে বলেন, আপনি মনে হয় অভিযানে আছেন, পরে কথা বলি।’ ওসি বলেন, ‘না বলেন; শাহীন আহমেদ কে, এখানে কী? আর আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি এক পক্ষের।’ ওসির প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদক জানান, শাহীন আহমেদ কেরানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি ঢাকা-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। তার পক্ষের নেতা-কর্মীকে বর্তমান এমপি ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পক্ষের নেতা-কর্মীরা আপনার উপস্থিতিতে হামলা করেছে। পরে হয়রানিও করা হচ্ছে।— এমন কথা শুনে ওসি বলেন, ‘শাহীন আহমেদ কেরানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান। এখানে কেন? আর ইলেকশন করতে হলে আগে তার উপজেলা ছাড়তে হবে। কারা এসব বলছে। থানায় সমস্যা থাকলে তারা কোর্টে যাক।’— কথা বলার মধ্যেই ফোন কেটে দেন ওসি।

সর্বশেষ খবর