শিরোনাম
সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের ৭ দফা সুপারিশ

মোস্তফা কাজল

স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি রোধে ৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া সুপারিশ এবং পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোগীর ডায়াগনসিসের ৪০ ভাগ কমিশন নেন চিকিৎসক। গত ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতিকে  দেওয়া ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ ও পর্যালোচনা প্রতিবেদন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সহযোগিতা  চেয়েছে দুদক। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য ৭ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে - ১. চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ ১ বছর থেকে বাড়িয়ে ২ বছর বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে উপজেলা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২. উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে পোস্টিং হওয়ার পরও কোনো চিকিৎসক যদি যোগদান না করেন বা কাজ না করেন তবে তাকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া যাবে না। ৩. চিকিৎসকদের জন্য সময় উপযোগী ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এবং বদলির নীতিমালা করতে হবে। ৪. সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকদের পদোন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক। ৫. দুদকে প্রায়ই অভিযোগ আসে, রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে চিকিৎসক শতকরা ৪০ ভাগ কমিশন পেয়ে থাকেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। ৫. সব প্যাথলজিক্যাল টেস্টের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দর সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। ৬. চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ব্র্যান্ড বা নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৭. প্রাইভেট প্র্যাকটিস নীতিমালা করতে হবে। দুদকের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্ব পালন করেন মেধাবী চিকিৎসকগণ। বেশির ভাগ চিকিৎসক মানব সেবায়ব্রতী হয়ে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। কিছু চিকিৎসক দায়িত্বপালনকালে অবহেলা, অনুপার্জিত আয়ের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া অনেক সরকারি চিকিৎসক অফিসে না এসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে বিভিন্ন কমিশন ও কথিত উপহার সামগ্রী গ্রহণ করেন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির ধারণা তুলে ধরা হয়েছে বার্ষিক প্রতিবেদনে। এ খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ শতাংশ চিকিৎসক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এ জন্য নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরার পাশাপাশি মনিটরিং ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধে চিকিৎসকদের জন্য যুগোপযোগী ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এবং বদলি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। হাসপাতালের চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আসে দুদকে। তবে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির টেকসই প্রতিরোধে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সরবরাহের হালনাগাদ তথ্য এবং চিকিৎসায় ব্যবহূত সচল যন্ত্রপাতির তালিকা, ভর্তি ফিসহ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেবার মূল্যতালিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রদানে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছর অন্তর বদলির ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল হাজিরার মাধ্যমে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর