মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় উপচে পড়া ভিড়

ঢাকা চিড়িয়াখানায় উপচে পড়া ভিড় —রোহেত রাজীব

ঈদের ছুটিতে পরিবার-আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। দুপুর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন নগরবাসী। ঈদের দিন বিকাল থেকেই রাজধানীর হাতিরঝিল, শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিমানবাহিনী জাদুঘর এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে ভিড় জমিয়েছেন রাজধানীবাসী। পাশাপাশি আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক, ওয়াটার কিংডম, এক্সট্রিম রেসিং গো কার্ট, মোটেল আটলান্টিসসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও কাটেনি ছুটির আমেজ। দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামতেই হাতিরঝিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়তে থাকে ভিড়। সন্ধ্যার সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় এ এলাকা। প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়কে আরও মধুর করে তুলতে অনেকেই ওয়াটার বোটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাতিরঝিলের বুকে। পানিতে ভাসমান বিভিন্ন রাইডে উঠতে শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতিরঝিলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা ইশতিয়াক হাসান বলেন, ঈদের ছুটিকে নিজেদের মতো করে কাটাতে ঘুরতে বের হয়েছি। হাতিরঝিলের ঠাণ্ডা বাতাস, রঙিন ঝরনা, ওয়াটার বোটের মজার ভ্রমণ আর হালকা খাবার আমাদের ভীষণ প্রিয়। শিশুপার্কে শিশুদের আনাগোনা বেশি থাকলেও বড়রাও শিশুদের সঙ্গে মেতেছিলেন আনন্দে। বিভিন্ন রাইডে উঠতে সারিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। মেয়ে নাগরদোলায় ওঠার বায়না ধরায় টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নার্গিস বেগমকে। তিনি বলেন, অন্য সময় ব্যস্ত থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে তেমন একটা সময় কাটানো হয় না। ঈদের ছুটিতে ওদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাইডগুলোতে উঠে ওরা ভীষণ মজা পাচ্ছে। ঈদের দিন বিকাল থেকেই কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে চিড়িয়াখানা। বাবা-মার হাত ধরে বেড়াতে এসেছিল আট বছরের মাইশা। চিড়িয়াখানা ঘুরে কেমন লাগল জানতে চাইলে সে বলে, বাবার কাছে অনেকদিন আগে হরিণ দেখতে চেয়েছিলাম। ঈদের ছুটিতে তাই বাবার সঙ্গে হরিণ, বানরসহ আরও অনেক পাখি দেখেছি। ঢাকার বাইরে আশুলিয়ার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। বিভিন্ন রকমের রাইড আর সুইমিংপুলে জনসমাগম পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। দিনের বেলা এসব বিনোদন কেন্দ্র ঘোরাঘুরি করে পরিবার-আত্মীয় স্বজন মিলে খাবার খেতে ভোজনরসিকরা ভিড় জমাচ্ছেন পূর্বাচলে গড়ে ওঠা ব্যতিক্রমী রেস্টুরেন্টগুলোতে। ঝলমলে আলো আর ডিজে পার্টিতে মেতে উঠতে বন্ধুদের সঙ্গে অনেকেই ভাড়া করছেন সুজজ্জিত নৌকা। রাতের বালুনদীর ঢেউ ছাপিয়ে আওয়াজ তুলছে সুরের মূর্ছনা আর বন্ধুদের উচ্ছ্বাস।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— রংপুর : ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র। কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে। আবার কেউ এসেছেন প্রিয় মানুষটির হাত ধরে। মনের আনন্দ আর উল্লাসে পিছিয়ে নেই ছোট শিশু আর বৃদ্ধরাও। ঈদের দিন থেকে নানা বয়সের মানুষ বেড়াতে আসেন রংপুর চিড়িয়াখানা, রংপুর জাদুঘর, সিটি চিকলি পার্ক, ঘাঘট পাড়ের প্রয়াস, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর শাশ্বত বাংলা, ভিন্ন জগত, আনন্দ নগর, কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, ফ্যান্টাসি জোন, মহিপুরঘাট, তিস্তা সড়ক সেতু, ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাস, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রে। ঈদের আগেই বিনোদন কেন্দ্রগুলো বাহারি সাজে সাজানো হয়। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল সকালে নগরীর নিসবেতগঞ্জে ঘাঘট নদের পাড়ে সেনা কল্যাণ পার্ক প্রয়াসে কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুুহিন ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের উচ্ছ্বাস মুখর উপস্থিতি প্রমাণ করে মানুষ এখন বিগত দিনের চেয়ে অনেক নিরাপদ। দুপুরে রংপুর চিড়িয়াখানার গেটে দেখা হয় স্পেন প্রবাসী বাহারুল হায়াত খানের সঙ্গে। গত বছর জানুয়ারিতে স্পেনে এক বাঙালি পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বাহারুল বলেন, দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করব বলেই বউকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। ভীষণ আনন্দ করছি। তাজহাট জমিদার বাড়িতে ‘রংপুর জাদুঘরে’ নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘুরতে আসা অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, সকালে ছয় নাতি-নাতনিকে নিয়ে বেরিয়েছি। চিড়িয়াখানা, ভিন্ন জগৎ, প্রয়াস ঘুরে দুপুরে জাদুঘরে এলাম। খুব ভালো লাগছে। বরিশাল : ঈদের প্রথম দিন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সব কিছু মিলিয়ে ঈদের দিনটি আনন্দ-উৎসবমুখরভাবে কেটেছে বরিশালবাসীর। আগামী কয়েকদিন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এসব বিনোদন কেন্দ্র পরিণত হয় লোকারণ্যে। এবারও কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী ত্রিশ গোডাউন এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কীর্তনখোলা নদীর ওপর নির্মিত দপদপিয়া সেতু (শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত), উজিরপুরের গুঠিয়ার দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমপ্লেক্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় দেখা গেছে ঈদের প্রথম দিনে। বিনোদন কেন্দ্রে আসা অনেকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছেন সুদূর বিদেশ থেকে। আবার কেউ ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে না পেরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। প্লানেট পার্কের রাইডারগুলো বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিশুদের। নওগাঁ : দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। এর আদি নাম সোমপুর বিহার। এটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ঈদ উপলক্ষে বাড়ানো হয়েছে পর্যটন পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই উপচে পড়া ভিড়েও দর্শনার্থীরা পেয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।

 ঐতিহাসিক পাহাড়পুর (সোমপুর বিহার) জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ছাদেকুজ্জামান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সরকারের রাজস্বও। বান্দরবান : ঈদের আনন্দকে আনন্দময় করতে বান্দরবানে ভিড় জমাচ্ছে পর্যটকরা। পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকের পদভাবে এখন মুখরিত হয়ে উঠে। তবে বৃষ্টিপাতের কারণে অন্যান্য বছরের তুলায় দূরের পর্যটন স্পট রুমার রিঝুক ঝরনা, বগালেক, কেউক্রাডং, থানছি তিন্দু, রেমাক্রী, বড় পাথর, নাফাকুমগুলোতে এবার পর্যটক সংখ্যা একটু কম হলেও শহরের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে বৃষ্টিপাত কমে গেলে কয়েকদিনের মধ্যে পর্যটকদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এদিকে পর্যটকদের পর্যটন স্পটগুলোতে যাতায়াত, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং পর্যটকরা যাতে কোনো প্রকার ভোগান্তির শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে প্রশাসনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঈদ এবং পর্যটকদের জন্য জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সর্বশেষ খবর