মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে জেএমবি সম্পৃক্ততা অস্ট্রেলিয়ার নওরোজ আমিনের

আটকের দুই বছর পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অষ্ট্রেলিয়ার পুলিশের

জুলকার নাইন

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নওরোজ আমিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেছে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ। দুই বছরের বেশি সময় আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিমানবন্দরে আটক হয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সী তরুণ নওরোজ আমিন। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে এমন সন্দেহজনক দ্রব্য লাগেজে পাওয়া যাওয়ার পর ইমিগ্রেশন থেকেই আটক করা হয় নওরোজ আমিনকে। পরে দীর্ঘ ও জটিল তদন্ত শেষে প্রায় আড়াই বছর পর রবিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলেও তিনি জামিন আবেদন করেননি। ফলে সন্ত্রাসবাদসহ তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত নওরোজকে নেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা হেফাজতে। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সূত্রের খবর, অভিযুক্ত নওরোজ রাইয়্যাত আমিন ওরফে আবু আতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও তার জন্ম মূলত ইংল্যান্ডে। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে নওরোজ আমিনের পরিবার। অস্ট্রেলিয়া থেকেই জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ নওরোজ ২০১৪ সালে ঢাকায় বাংলাদেশি এক নারীকে বিয়ে করেন। পরে বাংলাদেশে জেএমবির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হন। ইতিমধ্যে তার অন্যান্য জঙ্গি সহযোগী এবং উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত স্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক আছেন। অস্ট্রেলিয়ায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দায়েরের তথ্য প্রকাশ করে বিবিসি ও এসবিএসের খবরে বলা হয়েছে, নওরোজ সংঘাতকবলিত বিদেশি কোনো জোনে সফর করার চেষ্টা করছিলেন। সম্ভবত হতে পারে তা বাংলাদেশ। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে চেয়েছিলেন। আদালতের ডকুমেন্টে দেখা যায়, নওরোজ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ও পরিকল্পনা করছিলেন। নওরোজ আমিন বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন এমন সব লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে, যারা তার মতো একই ধরনের আদর্শে বিশ্বাসী। এরপর তারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে সম্ভবত একটি সন্ত্রাসী হামলা চালানোর কথা ভাবছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সীমানায় গিয়ে বৈরী কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগে তার যাবজ্জীবন সাজা পর্যন্ত হতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপি অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যেসব জিনিসপত্র তার লাগেজে পাওয়া গিয়েছিল, তাতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সন্ত্রাসবাদের প্রতি তার সমর্থন ছিল। এএফপি আরও জানায়, অস্ট্রেলিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড সিডনির ইঙ্গলেবার্নে নওরোজের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে শনিবার সকালে। তবে সেখান থেকে কী উদ্ধার করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়নি। সূত্রের খবর, নওরোজের লাগেজে বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন ফর্মুলাসহ বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়। জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা লোকজনের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়, যাতে করে সন্দেহভাজন জিহাদির বিদেশ ভ্রমণ আটকে দেওয়া যায়। এমন একটি ঘটনাই ঘটে নওরোজ আমিনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগেই ঢাকায় যে কোনো বিদেশিদের ওপর হামলা আশঙ্কা প্রকাশ করে গোয়েন্দাতথ্যের কথাও জানানো হয়েছিল। পরে ২১ সেপ্টেম্বর জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের রিজার্ভ ব্রিগেড ‘আদ্-দার-ই-কুতনি’ বিভাগের কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল গ্রেফতার হলে তার মাধ্যমে নওরোজ আমিন ও তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনের জেএমবি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। পরের মাসে ইমাম মেহেদীর তথ্যে ঢাকার চকবাজার থানাধীন সোয়ারীঘাটের ৯/১০ নম্বর বাড়ি থেকে শিক্ষিকা সাদিয়া আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। ইমাম মেহেদীর কথামতো, জেএমবির একটি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য সাত লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। পুরো টাকাই সাদিয়ার দেওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে তিনি নগদ এক লাখ টাকা ইমাম মেহেদীকে দিয়েছেন। পরে সাদিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ২০১৪ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু আতা ওরফে নওরোজ আমিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নওরোজ দুই দফায় ছয় মাস বাংলাদেশে অবস্থান করেন। বিয়ের আগ থেকেই নওরোজ জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে অবস্থানকালে নওরোজের সঙ্গে রিয়াসাত এলাহী চৌধুরীর (২৮) পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় ইমাম মেহেদী হাসানের সঙ্গে। বিয়ের পর নওরোজ তার স্ত্রী সাদিয়া আমিনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। সাদিয়া জেএমবিতে যোগ দেন। অর্থ এবং বিভিন্ন বিস্ফোরকের ইংরেজি ফর্মুলা বাংলায় অনুবাদ করে জেএমবির অন্য সদস্যদের দিতেন সাদিয়া আমিন। এগুলো সাদিয়ার কাছে দিতেন নওরোজ আমিন।

সর্বশেষ খবর