মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বিঘ্নে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

সাঈদুর রহমান রিমন

নির্বিঘ্নে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ইটপাথরের কর্মস্থল রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেকটা আগেভাগেই ঢাকামুখী হয়েছেন যাত্রীরা। সড়ক, নৌ ও রেলপথে লাগেজসহ স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল থেকেই ফিরতে দেখা গেছে তাদের। তবে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের সংখ্যা এখনো তুলনামূলক কম।

ঈদুল ফিতরের তিন দিনের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে রবিবার। গতকাল ফের যথানিয়মে খুলেছে সব সরকারি অফিস-আদালতসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ রবিবার রাতের কোচ বা ট্রেনে ঢাকায় ফিরে সকালেই কর্মস্থলে হাজির হয়েছেন। আবার অনেকে ঈদ ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি নেওয়ায় তারা বাড়ি ছাড়ছেন ধীরে সুস্থে। ফলে যানবাহনে বাড়তি চাপ বা হুড়োহুড়ি ছিল না কোথাও। টার্মিনালগুলোও ছিল অনেকটা ফাঁকা। কোনো গাড়ি এসে থামলেই কেবল কিছুসংখ্যক রিকশা ও সিএনজির দৌড়ঝাঁপ লক্ষ্য করা গেছে। বাকি সময়টা যাত্রীদের অপেক্ষায় ঠাঁয় বসে থাকতেই দেখা গেছে তাদের। পরিবহন কর্মকর্তারা বলছেন, যারা সরকারি ছুটির সঙ্গে খুব বেশি বাড়তি ছুটি নিতে পারেননি, তারাই মূলত ঢাকায় ফিরছেন। এবার ফিরতি পথে মহাসড়কে যানজট না থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই রাজধানীতে ফিরছেন যাত্রীরা। পরিবহন চালক-শ্রমিকরা জানান, মানুষজন আসতে থাকায় কয়েক দিন ধরে ফাঁকা ঢাকা প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। আগামী বুধবার থেকে পুরোদমে ঢাকায় ফেরা শুরু হবে বলেও ধারণা করছেন তারা।

রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, তিন দিনের ঈদের ছুটি শেষে দূর-দূরান্ত থেকে ফিরছেন নগরবাসী। তাদের বেশিরভাগই ময়মনসিংহ, শেরপুর, মুক্তাগাছা, টাঙ্গাইলসহ আশপাশ জেলার মানুষ। একইভাবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঈদ শেষে ফিরে আসছেন কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী ও ফেনী এলাকার মানুষজন। তবে গাবতলী টার্মিনালে আন্তজেলা কোচগুলোর আগমন সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। হাতেগোনা যে কয়টি পরিবহন সার্ভিসের কোচ এসে থামছে তা উত্তরবঙ্গ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। হানিফ পরিবহনে রাজশাহী থেকে ফিরে আসা যাত্রী জোনায়েদ আলম একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগাম ছুটি নিয়ে ঈদের তিন দিন আগেই ঢাকা ছেড়েছিলাম। ছেলে-মেয়েরা গ্রামীণ পরিবেশে খুবই উচ্ছ্বাসে ঈদের ছুটি ভোগ করেছে। আমসহ মৌসুমি ফল-ফলাদি ছিল তাদের বাড়তি পাওনা। গ্রামীণ আদর-আপ্যায়ন আর মুক্ত পরিবেশ ছেড়ে তারা ঢাকার পথে পা বাড়াতেই আগ্রহী ছিল না। তবুও কর্মস্থল আর পড়াশোনার তাগিদে আজই ফিরতে হলো। এদিকে নৌ পথেও ঢাকা ফিরতে শুরু করা যাত্রীর সংখ্যা এখনো খুব বেশি নয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে ঈদের ছুটি শেষ করে ফিরছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সেখানেই ব্যাগ-ব্যাগেজ, স্ত্রী-সন্তানসহ ফিরে আসা রবিউল ইসলামের সঙ্গে দেখা মেলে। তিনি পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা, ঝালকাঠির স্বরূপকাঠিতে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ফিরলেন। তিনি বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় স্বজন-পরিজনদের জন্য একগাদা নতুন কাপড় চোপড় ভর্তি কয়েকটা ব্যাগ কাঁধে পিঠে বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। ভাবলাম ফেরার সময় এত ব্যাগ-ব্যাগেজ হবে না। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা, গ্রামের কাঁচা টাটকা সবজি, ফল-ফলাদি আর গাভীর খাঁটি দুধ ভর্তি বোতলে বোতলে দ্বিগুণ বোঝা টেনে ফিরতে হলো।

এদিকে রাজধানীতে এখনো সিএনজি ও রিকশার সীমিত চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। নগর পরিবহনের অনেক বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার যাত্রায় ঢাকা ছেড়েছে। সেগুলো এখনো ঢাকায় ফিরেনি। বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে যাত্রীরা নেমেই রিকশা ও সিএনজি সংকটে পড়েন। যেসব রিকশা সিএনজি পাওয়া গেছে তারা দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া মিটিয়ে তবেই গন্তব্যে গেছে। রাজধানীর অনেক রুটের গাড়িগুলোতেও বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিয়েছে। কুড়িল থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা চলাচলকারী বিআরটিসি সার্ভিস এসি গাড়ির ভাড়া হাতিয়ে নিলেও যাত্রীদের ভাঙাচোরা নন এসি গাড়িতে চলাচলে বাধ্য করেছে। মিরপুর থেকে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনও ২৫ টাকার স্থলে ৪০/৫০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে।

ফিরতি ট্রেনে ঢাকায় এসে পৌঁছানো যাত্রীরা ছিলেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তারা জানিয়েছে, পথের কোনো ঝুট ঝামেলায় পড়তে হয়নি তাদের। অনায়শে যথাসময়ে তারা ট্রেনে ফিরতে পেরেছেন।

সর্বশেষ খবর