মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল আতঙ্ক ঢাকার ফাঁকা রাস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতরের ছুটির আমেজে রাজধানী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। ছুটি শেষে গতকাল অফিসপাড়া খোলা থাকলেও আমেজ ছিল ঠিক ঈদের মতোই। ছুটিতে ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় নতুন আতঙ্ক বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল। ঢাকায় কর্মব্যস্ত জীবনে মোটরসাইকেল গতিতে চালানোর সুযোগ কম। তবে ঈদে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে অনেকে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। আর এতে এক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে জনমনে। রাজধানীর মতিঝিল, হাতির ঝিল, কাকলী, বনানী, উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, পান্থপথে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ ছাড়া ওই সব রাস্তায় বেশির ভাগ মোটরবাইক আরোহীর মাথায় হেলমেটও চোখে পড়ছে না। সাধারণত কিশোর বয়সের ছেলেদের মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে চালাতে দেখা গেছে। আর এতে হচ্ছে দুর্ঘটনা। এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ।

জাহিদ নামে হাতির ঝিলের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, ঈদের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা তার চোখে পড়েছে। জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর) পরিচালক ডা. আবদুল গনি মোল্লা বলেন, ‘ঈদের দিনের দুর্ঘটনা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু পরের দুই দিন এ সংখ্যা অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। দুর্ঘটনায় জরুরি বিভাগ এবং ভর্তি রোগী মিলে রবিবারের সংখ্যা ছিল দেড় শ। আজ (সোমবার) সে সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত তিন দিনে চার শর বেশি লোক চিকিৎসা নিয়েছেন শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাজনিত কারণে।’ তিনি জানান, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেলে লেগে, অটোরিকশার সঙ্গে লেগে, নসিমন ও করিমনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনায় ওই সব আহতের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, ইস্কাটনের দিলু রোডের বাসিন্দা বাবুল (৩০)। তিনি প্রাইভেটকারচালক। ঈদের দিন সকালে বন্ধু রিপনকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মার পাড়ের দিকে বেড়াতে যান। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় তারা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া রোডে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। স্লিপ কেটে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবুল। আরোহী রিপনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে মগবাজারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবুল হাসনাত জানান, ঈদের রাতে তিনি বাসা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে যাওয়ার সময় অন্তত তিনটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দেখেছেন। আর এসব মোটরসাইকেল আরোহীদের বয়স অনেক কম। তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে যায়, তাতে আমাদের নিজেদের কাছেই আতঙ্ক লাগে। যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আরোহীর সঙ্গে রাস্তার লোকও দুর্ঘটনায় পড়বে।’ ঈদের দিন থেকে শুরু করে গত তিন দিনে ঢামেকের জরুরি বিভাগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল।  

নাবিস্কো ট্রাফিক সিগন্যালের সার্জেন্ট মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বছরের ৩৬৫ দিন আমরা আইন প্রয়োগ করে থাকি। তাই আজকের দিনে একটু ছাড় দেওয়া। তবে অফিশিয়ালি কোনো অর্ডার নেই যে অভিযান বা মামলা করতে পারব না। জনগণ যদি পুলিশের ভূমিকা নীরব দেখে আইনের অপব্যবহার করে, তাহলে তাদের ক্ষতি তারা নিজেরাই করবে।’

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গতবারের ঈদে আমাদের পরিসংখ্যানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি ছিল। এবারও এই বেপরোয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই এটি এক ধরনের আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর