শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিচারক সংকটে মামলাজট বাড়ছে আপিল বিভাগে

দ্রুত নিয়োগ চান আইনজীবীরা

আরাফাত মুন্না

বিচারক সংকটে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাজট বেড়েই চলেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে পুরনো মামলার সঙ্গে নতুন করে জটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় দুই হাজার মামলা। চলতি বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ২৪৬টি, যেখানে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ১৬ হাজার ৫৬৫টি। এ অবস্থায় আইনজ্ঞরা দ্রুততম সময়ে আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, শিগগিরই নতুন বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া হলে আপিল বিভাগে মামলার জট আরও বাড়বে। বিচারক সংকট দূর করে আবারও আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ সচল করার দাবি তাদের। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, আপিল বিভাগে বর্তমানে চারজন বিচারপতির একটিমাত্র বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। গত বছরের শুরুতেও আপিল বিভাগে আটজন বিচারপতি দুই বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এরপর অবসর ও পদত্যাগের কারণে বিচারপতি কমলেও নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

সংবিধান বা সুপ্রিম কোর্ট রুলসের কোথাও বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারিত না থাকলেও সাত বছর আগেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা এক আদেশেও আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারক থাকবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানে বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত ক্ষমতা একমাত্র রাষ্ট্রপতিকেই দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলেই বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন। সংবিধানের ৯৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ এবং নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।” সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালের শেষের দিকেও আপিল বিভাগে নয়জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। গত বছর ১ জানুয়ারি বিচারপতি বজলুর রহমান ছানার মৃত্যুর পর আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জনে। পরে ১৪ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও ৭ জুলাই বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ছয়জনে। এরপর তিন মাসের মধ্যে আপিল বিভাগের আরও দুজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১০ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। আর সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাওয়ার দিন ২ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্বরত মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাই কোর্টে ১৮ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি শিগগিরই আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।’ চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন ১৮ হাজার ২৪৬টি মামলার মধ্যে ১২ হাজার ১৩৬টি দেওয়ানি, ৬ হাজার ২টি ফৌজদারি এবং অন্যান্য মামলা রয়েছে ১০৮টি। এই সময়ের মধ্যে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫টি মামলা। আপিল বিভাগ বিচারপতি নিয়োগের প্রয়োজনিয়তা উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি হাই কোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। আপিল বিভাগেও হবে। আশা করছি জ্যেষ্ঠতা এবং দক্ষতা বিবেচনায় নিয়োগ হবে।’ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে মামলাজট বাড়ছে, দ্রুত বিচারক নিয়োগ না দেওয়া হলে এ জট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। আপিল বিভাগে এখনই কমপক্ষে পাঁচজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা শিগগিরই এ নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আপিল বিভাগে আগে দুটি বেঞ্চে মামলা পরিচালনা হতো। বিচারকের অভাবে একটি বেঞ্চ বন্ধ রয়েছে। এতে উচ্চ আদালতে মামলাজট তীব্র আকার ধারণ করছে।

সর্বশেষ খবর