গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুনির্দিষ্টভাবে ৬০ কেন্দ্রে ১৫৯টি অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুরে অনিয়ম কম হলেও গাজীপুরে অনিয়মের পরিমাণ বেড়েছে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম। সংস্থার সদস্য আবদুল আওয়ালের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও হারুন- অর-রশীদ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বমোট ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ইডব্লিউজি পুরো ৫৭টি ওয়ার্ডের ১২৯টি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। কেন্দ্র খোলার সময়, ভোট গ্রহণ কার্যক্রম, কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ও গণনা এবং কেন্দ্রের বাইরে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। তা হলো, জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা এবং কেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তির অবস্থান। এসব অনিয়মের বেশির ভাগই দুপুরের পর সংঘটিত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রে ভোট প্রদানের গড়হার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ। ড. আবদুল আলীম বলেন, ইডব্লিউজির নিয়োগকৃত পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ৯৮ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত ছিল। নির্ধারিত সময়েই ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়। ভোট গ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট বাক্সগুলো যে খালি ছিল তা প্রমাণের জন্য পোলিং এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকদের সামনে ব্যালট বাক্স খোলা হয়। ভোট গ্রহণ শুরুর সময় সব কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ কেন্দ্রে ১ থেকে ২০ জন ভোটার, ২০ দশমিক ২ শতাংশ কেন্দ্রে ২০ থেকে ৪০ জন ভোটার এবং ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি ভোটারের লাইন দেখা গেছে। ভোট গ্রহণের সময় ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮১ দশমিক ৪ শতাংশ কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের দেখতে পেয়েছেন। অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৬টি কেন্দ্রে।

আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে— এমন ঘটনার সংখ্যা ৩টি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ৩টি এবং পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৬টি। কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ঘটনা ২৮টি, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে প্রার্থীর পক্ষ থেকে যানবাহন সরবরাহের ঘটনা ২৪টি, কেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে ৩০টি, কেন্দ্রের ভিতরে সহিংসতা ঘটেছে ৮টি এবং কেন্দ্রের বাইরে ৯টি, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ২১টি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘটনা ৫টি, অন্যান্য ১৬টি। এ ছাড়া ভোট গণনার সময় ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ফলাফল শিটে একজন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে লিখেছেন। তখন বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।