রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেওয়ারিশ কবরে ওয়ারিশদের কান্না

আলী আজম

হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নিহত পাঁচ জঙ্গি এবং বেকারির এক কর্মীর লাশ দাফন করা হয়েছিল বেওয়ারিশ হিসেবে। ছিল শুধু সিরিয়াল নম্বর। এখন আর সেই সিরিয়াল নম্বরগুলোও নেই। কেবল বেকারির কর্মী সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের একটি নামফলক দেওয়া হয়েছে, যদিও তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। কবরগুলো বেওয়ারিশ হলেও তাদের ওয়ারিশদের আনাগোনা ছিল বছরজুড়েই। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলেছেন তারা। দোয়া-দরুদ পড়েছেন নিয়মিত। কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে তারা ওই কবরে আসছেন। জুরাইন কবরস্থানের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের পর তাদের পরিচয় হয় শুধু সিরিয়াল নম্বর। কিন্তু এখন বেকারি কর্মী সাইফুলের কবরে বেড়া রয়েছে। রয়েছে পরিচয়পত্রের নামফলকও। অন্য পাঁচ জঙ্গির কবর একত্রে বেড়া দেওয়া হয়েছে। জুরাইন কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারী দাদন জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের কবরগুলো একত্রে রয়েছে। তিনি এবং হারুন এর দেখভাল করেন। জঙ্গিদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে কবর দেওয়ার পর নিহতের স্বজনরা আসতে শুরু করেন। ক্রমেই এটা কমে এসেছে। তবে সাইফুলের স্ত্রীসহ তার পরিবার নিয়মিত আসছেন। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন। দোয়া করছেন। প্রথম দিকে তারা জঙ্গিদের কবর পরিষ্কার করার জন্য বকশিশ দিতেন। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর জঙ্গিদের কবর পরিষ্কার করতে তারা নিষেধ করেন। কবর পরিষ্কার না করার জন্য তারা বকশিশ দেন। এর পর থেকে পরিষ্কার না করায় কবর ও আশপাশ প্রাকৃতিক গাছপালায় ভরে যায়। কিন্তু পুলিশ এসে কবরগুলো পরিষ্কার করতে বলায় তা পরিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে কবরগুলো পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হলি আর্টিজানে নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন এবং অন্য ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের লাশ পাশাপাশি দাফন করা করা হয়েছে। প্রথম কবরটি হলি আর্টিজানের কর্মী সাইফুলের। সেখানে একটি সুপারি গাছ রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য জঙ্গিদের লাশ। কবরগুলো সবুজ রঙের বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা।

কবরগুলো সবুজ ঘাস ও লতাপাতায় ভরে গেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর পাল্টা কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। এরা হলেন নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল এবং রেস্তোরাঁর কর্মী সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।

 জঙ্গিরা মারা যাওয়ার পর তাদের লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত হয়। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু তাদের লাশ নিতে কেউ আসে না। নাম-পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাদের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে ‘লাশ নিতে না চাওয়ায়’ জুরাইন কবরস্থানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ দাফন করা হয়। জঙ্গিদের দাপটে গোটা দেশ থাকে আতঙ্কে। সেই দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের শেষ পরিণতি হয় বেওয়ারিশ লাশ। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে জঙ্গিদের লাশ সে সময় গ্রহণ না করলেও তাদের কবর জুরাইন কবরস্থানে তারা প্রায়ই আসছেন।

সর্বশেষ খবর