রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

জেল-জরিমানা উভয় দণ্ডই হতে পারে মায়া শান্তোসের

মানিক মুনতাসির

জেল-জরিমানা উভয় দণ্ডই হতে পারে মায়া শান্তোসের

ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মায়া শান্তোস দেগুইতো জেল ও অর্থদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত     হতে পারেন। তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় ঘোষণা হবে শিগগিরই। কেননা রিজার্ভ চুরি সংঘটনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত কনফারমেশন ছাড়াই তিনি অর্থ ছাড় করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে করা তদন্তের একটি প্রতিবেদন ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ফিলিপাইনের আরসিবিসির কর্মকর্তাদেরই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং কিংবা সে দেশের ব্যাংকিং আইন ভঙ্গের অপরাধে শাস্তি পেতে যাচ্ছেন মায়া। ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশে পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৫ জুলাই ম্যানিলার আদালতে বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে ফরেনসিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে সিআইডির দুই কর্মকর্তা প্রতিবেদনটি জমা দেন। পাশাপাশি তারা মৌখিক বক্তব্য দিয়েছেন আলাদতে। কর্মকর্তা দুজন হলেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ও ফাহিম হোসেন। এ বিষয়টি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। এদিকে ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা ছাড়াও একটি বিকল্প পথ এখনো খোলা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে আদালতের বাইরে আলোচিত এ ইস্যুর সমাধান হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও চুরি যাওয়া অর্থের বাকি অংশ ফেরতের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিনস (বিএসপি)’-এর গভর্নর নেস্টর ইস্পিনিলা ৪ মে ম্যানিলায় একটি বৈঠক করেন। সে সময় ৩ থেকে ৬ মে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫১তম বার্ষিক সভা উপলক্ষে ফিলিপাইন সফরে ছিলেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং আইন ভঙ্গ করার অপরাধে ইতিমধ্যে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে এক বিলিয়ন ডলার জরিমানাও করেছে, যা সে দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) দেখভাল করছে। এ ছাড়া আদালতের বাইরে বিষয়টি সমাধানের জন্য ফিলিপাইন সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতের বাইরে বিষয়টি সমাধান না হলে ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাকাটা যখন নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক থেকে চলে যায়, ওই সময় ২৭ থেকে ২৮টা ট্রানজেকশন হয়েছিল। আমরা ধারণা করছি, ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের ১৫ থেকে ২০ জন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে জুপিটার শাখার ব্যবস্থাপক একজন। এমনকি এই অর্থ পাচারের সঙ্গে আরসিবিসির নিচ থেকে ওপরের অনেক কর্মকর্তাই জড়িত রয়েছেন। তাই আরসিবিসির বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলা করতেই পারি। তবে তা করতে আরও সময়ের প্রয়োজন হবে।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের কোনো হদিস মেলেনি।

সর্বশেষ খবর